ডাক্তার শরদিন্দু মোহন ঘোষাল
(কাকাবাবু স্মরণে)
সত্যব্রত সেন মজুমদার (প্রসাদ) (বরোদা)
তখনকার
সময় ডাক্তারবাবুর
রুগী দেখার ফী ছিল
১৯ টাকা বাড়িথেকে ডাক
এলে তখন নিতেন ৩৮
টাকা ! আমরা দেখেছি ওনার
রুগ্গি দেখার কায়দা
অন্য ডাক্তারদের থেকে একদম
আলাদা ছিল ! রুগীদের বলতেন
পায়খানা এবং মূত্র নিয়ে
আসতে, উনি সেটা খালি
চোখে পরীক্ষা করতেন
এছাড়া রুগীকে তার কষ্টের
কথা পুলিশদের মতন
জেরা করতেন, ওষুধ
খুব কম দিতেন, রুগীর
খাবারের ওপর
বেশী জোর দিতেন ! অনেক
রুগী ওষুধ কম দেন
বলে অসন্তুষ্ট হতেন
! তখন
কার দিনে অষুধের মিক্সচার
দেবার চলন ছিল বোতলে
লেভেল দেওয়া এখন সেটা একদম
উঠে গেছে!
না এক্সরে
না বেশি ঔষধ
রুগীরা অসন্তুষ্ট হলেও রোগ
মুক্ত হতেন বলে সব
রুগীর ওনার
উপর খুব ভরসা
ছিল ! ওনার গাড়ির ড্রাইভার
কাম কম্পাউন্ডার ছিল ছবিনাথ, ওই বাড়ীর ঢোকার
মুখে ডান দিকে থাকতো
! আসলে ওটা একটা গাড়ির
গ্যারেজ কে থাকার জায়গা
বানানো হয়েছিল ! গরীব
রুগী হলে ছবিনাথকে বলতেন,
স্যাম্পল পাওয়া ঔষধ দিয়ে
দিতে!
উনি ছিলেন
প্রিন্স ওফ ওয়েলস মেডিকেল
কলেজ পাটনার মেডিসিন বিভাগের
প্রফেসর এবং হেড অফ
দি ডিপার্টমেন্ট! কর্মজীবনে
কিছুদিন গান্ধী, ময়দানের এক
পাশে কোয়াটারে ছিলেন
! গঙ্গার ধারে, একপাশে
গার্লস হাই স্কুল এবং
আরেকপাশে মগধ মহিলা কলেজ
বিরাট বড় কম্পাউন্ড তার
মাজখানে বাড়ি ছিল ! নানা
রকম ফল এবং ফুলের
গাছ ছিল ! আমার এখনো
মনে আছে আমের গাছ,
জাম গাছ, পেঁয়ারা এবং
লেবুগাছ সময়ের তালে বহুবার
ওখানে গেছি এবং এইসব
ফল পেড়ে খেয়েছি! পিছন
দিকে গঙ্গার ধারে অনেক
জায়গা ছিল সেখানে মালি
আলুর চাষ করতো ! রাতের
বেলায় সজারু আসতো আলুর
ক্ষেতে, অনেকবার সজারু
মেরে আমাদের বাড়ীতে ছবিনাথ
গাড়ী করে দেখাতে এনেছিল
!
ওই
কোয়াটারে সুভাষদার বিয়ে
হল, সামিয়ানা খাটিয়ে
প্রচুর লোক নিমন্ত্রিত হয়ে
ছিল ! আমরা স্কুলের পরে
পায়েহেঁটে প্রায়ই কাকা বাবুর
কোয়াটারে যেতাম এবং ফেরার
পথে কোনো কোনো দিন
বাবার সঙ্গে সাইকেল করে
ফিরতাম! সুভাষদা ছিলেন
হিন্দুস্থান থম্পসন কোম্পানীর প্রথম
ভারতীয় ম্যানেজিং ডিরেক্টর
!
ডাক্তার হিসেবে
মহান ছিলেন এছাড়াও তাঁর
নিজের জীবনে অনেকগুলো গুণ
ছিলো
অনেকে হয়তো তা জানেন
না ! এবার সেই গুলো
নিয়ে লিখবো ! ওনার
শালা ছিলেন ভারতের স্টাটিস্টিকের একজন মহান কিং
বদন্তী স্বর্গীয় প্রশান্ত
চন্দ্র মহানবীশ যিনি
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইন্সটিটুট, বরানগর, কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা, যাকে বলা হয় ফাদার
অফ ইন্ডিয়ান স্যাটিস্টিক! বিহারে গিরিডি শহরে
(বর্তমানে ঝাড়খন্ড ) তাঁর
বিরাট বড় সংস্থান ছিল
আমি ওনার স্ত্রী শ্রীমতি
রানী মহানবীস কে
ওখানে দেখেছি !
মানুষ হিসেবে
কাকাবাবু ভীষণ রসিক ছিলেন
যেহেতু আমি বেশ কাছ থেকে
ওনার সংস্পর্শে
এসেছি বলে কয়েকটা ঘটনা
আপনাদের লিখে জানাই! বাবার
জ্বর হয়েছিল ইনজেকশন চলছিল, বিকেলে
কাকাবাবুর বাড়ী গেলাম, গিয়ে
বললাম বাবার ইনজেকশন সেস
হয়ে গেছে। উনি
বললেন সেস হয়ে গেছে
নয় শেষ হয়ে গেছে
মুখটা বড় করে বললেন
শ এবং বললেন বাইরে
গিয়ে অভ্যেস করো! ভাবতে
অবাক লাগে যে জীবনে
কখন সস
বলিনি কথা
উঠলে ৫০/৬০ বছর
পরেও আগেকার ঘটনায় কাকাবাবুর কথা
মনে পড়ে !
আরেকটা ঘটনা
লিখে জানাই, তখন
কলেজে পড়ি ১৯৬০ দশকের
ঘটনা, স্বাস্থ্য বর্ধনের জন্য
বিকেলে কলেজের জিমে যাই,
কিছুদিন ধরে পিঠে ব্যথা
হচ্ছিলো একদিন ওনার রুগী
দেখার চেম্বারে হাজির
হলাম পুরো ঘর ভর্তি
রুগীর ভীড়, আমার কাছে
আসার কারণ জানতে চাইলেন
সব বুঝিয়ে জানালাম আমাকে
জামা খুলে ব্যায়াম করে
দেখতে বললেন তারপর ছবিনাথ
কে কাগজে লিখে বললেন
একে বুঝিয়ে দাও ! ছবিনাথ
আমাকে কাগজে লেখা ইংরেজি
প্রেসক্রিপশন দেখালো তার বাংলা
মানে হয় নেই অসুখ নেই
ঔষধ! একজন ওখানে উকিল
বসে ছিল তাঁকে জিগ্যেস
করলেন তুমি কখনো মক্কেল
কে বলো যে মকদ্দমাতে হেরে
যাবে ফরিয়াদ করোনা উকিল
বললো বলি. তখন পেছন
থেকে আরেকজন বললো উঠলো
মিথ্যে কথা বলছে !
কাকাবাবুর গরীব
লোকের উপর কতযে দান
ছিল এবং কতজন কে কন্যাদায়
থেকে মুক্ত করতে
সাহায্য করেছেন তাঁর কোন
হিসেব নেই ! লোকে অপরিচত
হয়েও বাবার কাছে আসতেন
হয় তাঁর রুগ্ন বা
অসুস্থ কাউকে দেখাবার জন্য
বা আর্থিক সাহায্যের জন্য,
বাবাকে উনি খুব শ্রদ্ধা
করতেন এবং কেউ সঙ্গে
গেলে খালি হাতে ফিরতেন
না ! বাবা আমার ওনার
সাহায্যে কন্যাদান পর্যন্ত
করেছেন !
সামাজিক দিকদিয়ে পাটনাতে ওনার
অনেক অবদান আছে
! মেয়েদের জন্য রাজেন্দ্র নগর
পাটনাতে রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন
করেন ! হার্ডিং পার্কের
কাছে পাটনাতে রবীন্দ্র
ভবন পেক্ষা গৃহ স্থাপন
করেন ! এখন ট্রাস্টিরা দেখা
শুনা করেন !
কাকাবাবুর
বিষয় বেশ কমই
লোক জানেন যে উনি
একজন ভালো শখের শিকারী
ছিলেন! ষাটের দশকে শিকারের
এতো নিয়ম কানুন ছিল
না এবং চারিদিকে বিস্তীর্ণ
জঙ্গল ছিল আর কিছু
নাহোক হরিণ নিশ্চই পাওয়া
যেত ! আমাদের গ্রামের পূর্ব
বাংলার বরিশালের এক
জ্যেঠা ছিলেন
স্বর্গীয় হীরালাল দাস
গুপ্ত। উনি একসময় ওরিয়েন্টাল
ইন্সুরেন্স কোম্পানির সেক্রেটারী
ছিলেন ন্যাশনালইজেশন হবার
আগে খুব ভালো শিকারী
ছিলেন কলকাতার যাদবপুর
সেন্ট্রাল রোডে ৪৫নম্বর বাড়ীটা
ওনার ছিল ! পাটনাতে এলে
আমাদের বাড়ীতে উঠতেন ! শিকার
সম্মন্ধে অনেক গল্প লিখেছেন
এবং হাতিতে বসে বাঘ
শিকার করেছেন! কাকাবাবু
ওনার সঙ্গে দল নিয়ে
একতারা, নবাদাতে বহুবার
হরিণ শিকার করেছেন আর
আমরা মজা করে হরিণের
সুস্বাদু মাংস খেয়েছি !
No comments:
Post a Comment