প্রয়াত লেখিকা এণাক্ষী চ্যাটার্জি


 

ফুলমতী : লোপামুদ্রা সিংহ দেব।

 ফুলমতী ।


                            লোপামুদ্রা সিংহ দেব।


     সাত সকালেই আমার মাথায় বজ্রাঘাত। কাজ করতে এসে ফুলমতি বললো ‘আমি কাল থেকে আর কাজে আসবো না’, হঠাৎ এই কথা! আমারই কোনও দোষ হলো নাকি! খোসামোদের সুরে জিজ্ঞেস করলাম-‘কি হলো বেটা? কেন আসবি না’? ‘আমার শাদী পরশু’। ‘শাদী’- আকাশ থেকে পড়লাম কথাটা শুনে। সবে চোদ্দ পেরিয়ে পনেরোতে পা দিয়েছে, আমার কাছে বসে কিছু কিছু পড়াশোনা,শেলাই শিখছে-তার কিনা ‘শাদী’! এদিকে ফুলমতি চা খেতে বসে মহানন্দে তার হবু বরের গল্প বলতে লাগলো। তারা নাকি কোন মজফরপুর থেকে এসেছে জীপ নিয়ে। বাবা,ছেলে, ছেলের বন্ধু আর ছেলের পিসি । উঠেছে চাইবাসার হোটেলে। গতকাল দেখে গেছে পরশুই বিয়ে। আর যাবার সময় নাকি ওর বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। বাবা,মা ভীষণ খুশি এমন জামাই পেয়ে। বুঝলাম ফুলমতীও বেজায় খুশি। আমার মনটা কেমন ‘কু’-গাইতে লাগলো। এ কেমন বিয়ে! অচেনা,অজানা একটা লোক,কটা টাকা দিয়ে তো কিনে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটাকে ।


     স্কুল যাবার পথে ফুলমতীর মা’র সাথে দেখা,তার কথা বলার সময় নেই। তবু তাকে জোর করে দাঁড় করিয়ে আশংকার কথা জানালাম। হেসেই উড়িয়ে দিলো ফুলমতীর মা। বুঝলাম টাকার যাদু একেই বলে। শুনবেও না,মানবেও না আমার কথা। তাই কিছু টাকা দিলাম বিয়ের উপহার হিসেবে।


     ফুলমতীর বিয়ের দিন দুপুরে আমরা চাইবাসা থেকে ফিরছি-দেখলাম লাল সাড়ি, সিঁদুর ভর্তি কপাল-জিপে করে ফুলমতী চলেছে তার বরের সাথে।ষন্ডামার্কা চেহারার তিনজন লোক আর এক বুড়ি সেই জিপের সওয়ার। সন্দেহটা আরও দৃঢ় হলো। ফেরার পথেই থানায় হাজির হয়ে সব কথা জানালাম বড়বাবুকে। দেখলাম উনিও একটু চিন্তান্বিত। বললেন খবর পেয়েছি একটা গ্যাং মেয়ে পাচারের নতুন ফন্দি বের করেছে, খোঁজ নিতে হচ্ছে-বলে তিনি ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমরাও বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।


     নাঃ সাতদিন হয়ে গেল ফুলমতির কোন খবরই যোগাড় করতে পারলোন�

'নজরুল স্মরণে' ~ ড. আশিস্ কুমার সিংহ

 'নজরুল স্মরণে'

~ ড. আশিস্ কুমার সিংহ


দ্বিতীয় পর্ব



আমাদের কবি নিজের জীবিত অবস্থাতেই নানা ভাবে অভিনন্দিত হয়েছেন -- 'বিপ্লবী কবি', 'চারণ কবি', 'প্রেমিক কবি', 'ধর্মভীরু মুসলমান কবি' আবার 'সুরের রাজা' আর 'ভোলা বাউল'-ও। অন্য দিকে বিরূপ আলোচনাও তাঁর ভাগ্যে কম জোটেনি। কখনো বলা হয়েছে -- 'শয়তানের পূর্ণাবতার', কখনো 'খোদাদ্রোহী', কখনো 'পাষন্ড', আবার 'মুসলমান রবীন্দ্রনাথ' নামেও নিন্দিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু লক্ষণীয় যে নানা ধরণের নন্দন ও নিন্দন - এর মাঝে আমাদের কবি কিন্তু সম্পূর্ণ বেপরোয়া হয়ে 'জাহান্নামের আগুনে বসে পুষ্পের হাসি হাসতে - হাসতে' এগিয়ে গেছেন। নিজেই স্বীকার করেছেন, 'আজ সৃষ্টি - সুখের উল্লাসে ---- মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে, আজ সৃষ্টি - সুখের উল্লাসে।' এই আপোষহীন বিদ্রোহী কবি নজরুল আজ‌ও আমাদের অনুপ্রাণিত এবং অনুরণিত করে চলেছেন। অন্যায় - অসুন্দরের বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ আহবান আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে নতুন জীবনীশক্তিতে উদ্দীপ্ত করে তোলার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ বিশেষ। 


গবেষকদের ধারণা অনুসারে ১৯২০ -র  মার্চ থেকে ১৯৪২ -র জুলাই, মোট মাত্র ২২ বছর নজরুলের সৃষ্টিশীল জীবন হলেও আমরা ১৯২২ থেকে ১৯৩০, মাত্র ৮ বছরের সময়কালকে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। এই সামান্য সময়টুকুর মধ্যে তাঁর, অগ্নিবীণা (১৯২২), দোলনচাঁপা (১৯২৩), ভাঙার গান (১৯২৪), বিষের বাঁশী (১৯২৪), সাম্যবাদী (১৯২৫), সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৬), সর্বহারা (১৯২৬), চন্দ্রবিন্দু (১৯৩০) ও নজরুল গীতিকা (১৯৩০) সহ বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেও তিনি লিখেছেন, যদিও সেগুলির মধ্যে প্রকৃতির ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে এই পর্বের রচনাগুলি সেই যুগের প্রতীক হিসেবে আজ‌ও আমাদের বিস্মিত করে চলেছে। কবির ব্যক্তিগত জীবনের অস্থিরতা আর বিদ্রোহ, কিংবা প্রেমের ক্ষেত্রে কবির অধীরতা, এই সমস্ত রচনাগুলিতে বাস্তব সত্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।


আমাদের মনে রাখার দরকার যে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে আমাদের কবির সর্বাধিক আদৃত 'বিদ্রোহী' কবিতাটি প্রকাশিত হয়  এবং প্রকাশনার সঙ্গে - সঙ্গে অভূতপূর্ব জনসমাদর লাভ করে। এমনকি ২৩ বছরের এই যুবকের আলোচ্য রচনাটি সেসময় রবীন্দ্রনাথকেও মুগ্ধ করেছিল এবং নজরুলকে স্বীকৃতি দিতেও তিনি কোন কার্পণ্য করেননি। আমাদের কবির অন্যান্য কবিতাতে বিদ্রোহের ভাব দেখা গেলেও প্রধানত এই কবিতাটির জন্য নজরুল আজ‌ও 'বিদ্রোহী কবি' রূপে সমাদৃত হয়ে আসছেন। বলা চলে যে ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে 'অগ্নিবীণা' কাব্যে বিদ্রোহের যে সুর তৎকালে ধ্বনিত ‌হয়েছিল, ইতিপূর্বে বাংলা সাহিত্যে তার দেখা পাওয়া যায়নি, এই সুর আমাদের সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন বলেই আর নতুন বলেই রবীন্দ্র যুগের কবিদের মধ্যে তিনি এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে আজ‌ও স্মরণীয় হয়ে আছেন। নজরুল সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন ---- "নজরুলকে 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয় এটা সত্য কথা। তাঁর অন্তরটা যে বিদ্রোহী, তা স্পষ্ট‌ই বুঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখন তাঁর গান গাইবো।" আসল কথা হলো এই যে নজরুলের কবিতা তখনকার তরুণ সমাজকে যতটা নাড়া দিয়েছিল, যুবা - মনকে যতটা আন্দোলিত করেছিল, ততটা অন্য কোন জনের লেখা করতে পারেনি। তিনি নিজে বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, কারাগারে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, এই অভিজ্ঞতার প্রমাণ তাঁর রচনায় পাওয়া যায় এবং বলাই বাহুল্য, অন্য কোন বাঙালি কবির ভাগ্যে এমনটি জোটেনি। নজরুল বিদ্রোহ করেছেন সমাজে ব্যাপ্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অরাজকতা ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। সমাজপতি সেজে যারা অন্যায় করেছেন, আমাদের কবির বিদ্রোহ তাদের বিরুদ্ধে আর ধর্মের ধ্বজাধারী মোল্লা - মৌলবী আর মোহান্তদের বিরুদ্ধেও। "মানুষেরে ঘৃণা করি', ও'কারা কোরাণ, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি  মরি! ও'মুখ হ‌ইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক'রে কেড়ে, যাহারা আনিল গ্রন্থ - কেতাব সেই মানুষেরে মেরে।", এছাড়া তদানীন্তন ইংরেজ শাসকদের প্রতিও তাঁর বিদ্রোহ বহু রচনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। 


কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, নজরুল শুধু বিদ্রোহী নন, তিনি প্রেমিক‌ও। "অনেকের ধারণা বিদ্রোহী কিংবা যোদ্ধার গলায় প্রেমের কথা ঠিক মানায় না। খুব‌ই ভুল ধারণা। যোদ্ধারাই সম্ভবতঃ শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। পৃথিবীর যাবতীয় মহাকাব্য তার প্রমাণ দেবে।*** বীরত্বব্যঞ্জক এমন গান যা শুনলে কাপুরুষের রক্তেও আগুন ধরে যায় আর তার পাশাপাশি এমন মিঠে গজল, যা শুনলে বীর পুরুষের ‌চক্ষুও একটি ললিত স্বপ্নের নেশায় আপনা থেকেই বুজে আসে। এই হলো নজরুলের ষোলো আনা পরিচয়। আট আনা বিদ্রোহ, আট আনা ভালোবাসা।"


 


Ref. No. BAB/ABP/2021/1                                                                       Date: 24.05.2021

 

    মাননীয় সম্পাদক

আনন্দবাজার পত্রিকা

 

বিষয়: সম্পাদক সমীপেষু বিভাগে প্রকাশনার জন্য

 

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত(২৩.০৫.২০২১) “রামমোহন চর্চা সব সরকারি গ্রন্থাগারে” সংবাদের পরিপেক্ষিতে আবেদন –

"অতি প্রসন্নতার বিষয়, ভারতে আধুনিক যুগের প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক  সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে দেশের সমস্ত সরকারি গ্রন্থাগারে ভারত ও বাংলার চার মনীষার (রামমোহন, সুভাষচন্দ্র, অরবিন্দ এবং সত্যজিত) নামে সব সরকারি গ্রন্থাগারেই একটি নির্দিষ্ট কোণ থাকবে।

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন ‘জাগরিত’ ভারত (রামমোহন), ‘পরাক্রমী’ ভারত (সুভাষচন্দ্র), ‘আধ্যাত্মিক’ ভারত (ঋষি অরবিন্দ) এবং ‘রচনাত্মক’ ভারত (সত্যজিৎ) নামে গ্রন্থাগারের এই বিভাগগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করবে।

কিন্তু দুঃখের এবং আশ্চর্যের বিষয় যে এই মহতী সিদ্ধান্তে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম বাদ। উনবিংশ শতকের এই প্রাণপুরুষকে আধুনিক বিদ্যালয়শিক্ষা-পদ্ধতির উদ্ভাবক, সমাজ সংস্কারক, মানবকল্যাণ-সাধক, আধুনিক বাংলাশিক্ষা-পদ্ধতির এবং গদ্যের জনক বললে হয়ত ভুল বলা হবে না। তিনি বাঙালি সমাজে, কর্মে ও মননে প্রগতিশীল সংস্কারের একজন অগ্রদূত। এক বছর আগেই আমরা তাঁর দ্বিশতজন্মবার্ষিকী পালন করেছি।

কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ও রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনকে এই সংবাদপত্রের মাধ্যমে অনুরোধ জানাই - বিদ্যাসাগরের নামেও চর্চার একটি নির্দিষ্ট কোণ প্রত্যেকটি সরকারি গ্রন্থাগারে স্থাপন করা হোক। সে কোণের নাম শিক্ষিত ভারত, কুসংস্কারমুক্ত ভারত, বিজ্ঞানমনস্ক ভারত, অনেককিছু হতে পারে। কিন্তু দুর্ভিক্ষ ও ম্যালেরিয়াক্লিষ্ট বাংলায় (এবং আজকের ঝাড়খন্ডে) তাঁর অক্লান্ত মানবসেবার কথা মনে রেখে আজ এই কোভিডের অতিমারির দিনে সে বিভাগের নাম ‘কল্যাণময় ভারত’ রাখার প্রস্তাব দিলাম। 

 

সুনির্মল দাশ,

সাধারণ সম্পাদক, বিহার বাঙালি সমিতি, রামমোহন রায় সেমিনারী, ডা০ বিধান চন্দ্র রায় পথ, পাটনা – ৮০০ ০০৪                 

যুগ্ম সম্পাদক, বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি, নন্দন কানন, বিদ্যাসাগর, জেলা – জামতাড়া, ঝাড়খন্ড

৯৪৩০২৯৪২৮৭ (মোবাইল)

নজরুল স্মরণে'.......... ~ড. আশিস্ কুমার সিংহ

 'নজরুল স্মরণে'..........

~ড. আশিস্ কুমার সিংহ


প্রথম পর্ব


"নজরুল" বাঙলার কবি, তিনি ভারতের কবি, আবার তাঁকে বিশ্ব মানবতার কবি বললেও কোন অত্যুক্তি হবে না, বরং এই ভাবনাটিকে আজকের দিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলির মূল মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে আমি আমার 'কবি - প্রণাম' পর্ব আরম্ভ করলাম।



সর্বজনীন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সর্বকালীন কবিও তিনি। ধর্মে - ধর্মে, মানুষে - মানুষে সেতু বন্ধনের কবিও‌ তিনি।  কবি ছাড়াও তিনি একাধারে ছিলেন ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, এমনকি প্রাবন্ধিকও। এছাড়াও তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সম্পাদক এবং অনুবাদক। এগুলি ছাড়াও তাঁর আরেকটি বড়ো পরিচয় আছে..... তিনি সংগীত জগতের একজন মহান ব্যক্তিত্ব.... তিনি গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত শিক্ষক এবং সংগীত পরিচালক। তিনিই 'চির - উন্নত - শির' পরিপূর্ণ একজন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে সাহিত্য চর্চা করার সময় তিনি বেশি পাননি, আর দেখবো যে ১৯২০ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর ছিল আমাদের কবির সাহিত্যিক জীবন আর এই অল্প সময়ে তিনি যা কিছু লিখেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে গীতি কবিতাই ছিল তাঁর প্রতিভার স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্র। এই কারণে মাঝে - মাঝেই মনে এই প্রশ্ন জাগে যে তিনি যত বড় কবি, তারচেয়ে বড় গীতিকার ছিলেন, যদিও এই ধরণের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কিংবা দেওয়া এই সামান্য রচনায় কখনো সম্ভব হতে পারেনা। তবে এখানে শুধু আমরা এইটুকু বলবো যে তিনি একাধারে 'জনগণের' কবি ছিলেন আবার 'জনগনের গীতিকার'-ও। নিজের সৃষ্টিতে তিনি যে সমাজের ছবি এঁকেছেন, সেই ছবি কেবল মাত্র সেই সমাজের হয়ে থাকেনি বরং সব সমাজের, সব সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর সৃষ্টিতে আনন্দ পেয়েছে। তার মানে হলো দেশ - কাল - পাত্রকে অতিক্রম করে তাঁর সৃষ্টি চিরন্তন মানুষের ব্যথা - বেদনা ও আশা - আকাঙ্ক্ষার একটা রূপকে সকলের মাঝে সজীব করে তুলতে পেরেছে বলেই শিল্পী নজরুল আজ‌ও আমাদের মাঝে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন।আজ ১১ই জ্যৈষ্ঠ। আমাদের কবির ১২৩-তম আবির্ভাব দিবসে আমি তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করছি। 


এপার বাংলা আর ওপার বাংলার প্রিয় কবি নজরুলের জন্ম এপার বাংলার বর্ধমানে আসানসোলের কাছে চুরুলিয়ায় -----১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইং ১৮৯৯ সালের ২৫-এ মে) আর তাঁর ওপার বাংলার ঢাকা শহরে ২৯-এ আগষ্ট ১৯৭৬-এ দেহাবসান ঘটে। তাঁর বাবা ছিলেন কাজী ফকির আহম্মদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর আমাদের কবির জন্ম হয়েছিল বলে তাঁর নাম দেওয়া হয় 'দুঃখু মিঞা'। মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতার অকাল বিয়োগের ফলে তাঁকে সেই ছেলে বেলা থেকেই সংসারের নানাবিধ অবাঞ্ছিত জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে হয়। ফলে ধারাবাহিক শিক্ষা নয়, খাপছাড়া ভাবে তিনি পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের সৌভাগ্য ক্রমে এই অনিয়মিত ভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করা কালে তিনি প্রখ্যাত কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিককে নিজের শিক্ষাগুরু এবং সহপাঠী হিসেবে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গ লাভ করেছিলেন।

'লহ প্রণাম': কবি নজরুলের আজ ১২৩তম আবির্ভাব দিবস:

 'লহ প্রণাম'




আজ ২৫ মে, আজ, যিনি সেই বিরল অসামান্যদের একজন, যাঁদের ঠিক কোন বিশেষ ছাপা চেহারায় চেনা যায় না, যিনি অসাম্প্রদায়িক হয়েও ছিলেন ধার্মিক আর চিরন্তন সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত সত্য ধর্মে ছিলেন আস্থাবান, রবীন্দ্র - পরিমন্ডলে বড় হয়েও, রবীন্দ্র - অনুরাগী হয়েও, ছিলেন একজন ভিন্ ধর্মী - ভিন্ গোত্রের কবি -- আবার সমকালীন কবি কুলের আবেদন যেখানে প্রধানতঃ মস্তিষ্কে, সেখানে যাঁর আবেদন ছিল পাঠককুলের হৃদয়ে -- সেই বহুমাত্রিক মানবপ্রেমিক; জাতি - ধর্ম - বর্ণ ও স্থান - কাল - পাত্র নির্বিশেষে অসহায় মানবজাতির দুঃখ মোচনের জন্য চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর জন্ম নেওয়া দুঃখু মিঞার; কবি নজরুলের আজ ১২৩তম  আবির্ভাব দিবস। এই উপলক্ষে তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করছি।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হল

 ২৫ শে মে ২০২১ ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতির পাকুড় শাখার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হল । 





সমিতির  উপদেষ্টা ও  আইনজীবী নিরঞ্জন ঘোষ, মানিক চন্দ্র দেব সচিব,শ্যাম পোদ্দার,ব্যাকুল সাধু ও সমিতির অন্য সদস্য কবির স্ট্যাচু তে মাল্যারপ করে ঐ মহাপুরুষের জীবনী কে তুলে ধরেন ।সেই সঙ্গে কোভিড ১৯ এর গাইডলাইন কে মাথায় রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ।

প্রতিবেদন - গৌতম চট্টোপাধ্যায়

কাজী

 কাজী

তোমার মত পাগল,
তোমার মত কবি –
কোনটা হতে চাইব,
মিলন-গানের নবী?
তোমার মত কথা,
তোমার মত সুর –
কোনটা পেতে চাইব,
যোদ্ধা-মনের নুর?
তোমার মত প্রেম,
তোমার মত ঘৃণা –
কোনটা নেব রসদ,
সাম্য-পথের বীণা?
তোমার মত হাসি,
তোমার মত জ্বালা –
কিসে গড়ব আমাদের
ঐক্যের রিসালা?
তুমি বলবে দুটোই।
কথায় তাই চাই।
কাজে, চাওয়ার ফাঁকির,
মাশুল গুনে যাই।

বিদ্যুৎ পাল
3

শ্রদ্ধাঞ্জলি---অঞ্জলি ভট্টাচার্য

 

শ্রদ্ধাঞ্জলি---অঞ্জলি ভট্টাচার্য

 


        অঞ্জলি ভট্টাচার্য্য---এই নামটির সাথে জামশেদপুরের অনেকেই পরিচিত। বিশেষ করে যারা পুরোনো বাসিন্দা। জামশেদপুরের বাইরে তিনি পরিচিত ছিলেন বাঙালি সমিতির সক্রিয় সদস্য হিসেবে।

          জামশেদপুরের সেই সময়ের নামকরা স্কুল, সাকচী হাইস্কুলের উজ্জ্বল ছাত্রী অঞ্জলি ভট্টাচার্য্য ম‍্যাট্রিক পাশ করেন খুব ই ভালো রেজাল্ট করে।  স্কুল কলেজে স্কলারশিপ নিয়ে ই পড়াশোনা।। ম‍্যাট্রিক পাশের পর নিজের স্কুলের মর্ণিং সেকশনে শিক্ষকতা আর সন্ধ্যায় কো-অপারেটিভ কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। অঙ্ক ও স্ট‍্যাটিসটিক নিয়ে B.A পাশ করার পর রাঁচির থারপাখনা গার্লস হাইস্কুলে অঙ্কের টিচার হিসেবে যোগ দিলেন। বছর দুই পরে নিজের প্রিয় জন্মভূমি জামশেদপুরে ফিরে এসে যোগ দিলেন L.I.C তে। ছোট থেকেই খেলাধুলায় দক্ষ অঞ্জলিদি স্কুল, কলেজ ও পরে L.I.C র চ‍্যাম্পিয়ন ছিলেন।

         নাটকেও পারদর্শী অঞ্জলিদি যোগ দেন I.P.T.A তে। স্বামী সুকুমার ভট্টাচার্য্য ও I.P.T.A র সদস্য ছিলেন। সংসার জীবনের সাথে সাথে নাটক ও সমাজ সেবার কাজ শুরু করলেন। যেখানেই মেয়েদের বিপদের খবর পেয়েছেন সেখানেই তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ছুটে গেছেন।

          এই সময় তিনি যোগ দেন বিহার বাঙালি সমিতি, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন,

প্রজ্ঞা ভারতী, রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র 'বুধসন্ধ‍্যা'তে।

           মন-প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছিলেন সমিতির কার্যকলাপকে। তাই ভাগলপুর, পাটনা, গয়া, পূর্ণিয়া, রাঁচি সহ সব জায়গায় গেছেন মিটিং এ যোগ দিতে। কার্মাটাঁডে বিদ‍্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের জন্যে আঁচল পেতে অর্থ সাহায্য চাইতে যেমন দ্বিধা করেননি , তেমনি নিজের সঞ্চিত অর্থ ও দিয়েছেন হাসিমুখে। তাঁর সুযোগ‍্য পুত্র সুমন ও আমেরিকা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে এই স্কুলের জন্যে। অন‍্যান‍্য সংস্থাতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সব সময়।

        তিনি ছিলেন বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশন ঝাড়খণ্ড এর প্রাক্তন সহ সভাপতি। বিদ‍্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতি, নন্দনকানন, কার্মাটাঁড এর কার্যকারী সমিতির সদস্য। শরীর সহযোগিতা না করায় তিনি অবসর নেন। অবসর জীবনের সঙ্গী ছিল রামকৃষ্ণকথামৃত ,গীতা, কোরান, বাইবেল, রবীন্দ্ররচনাবলী, জীবনানন্দ দাসের কবিতা ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা। তাঁর কন্ঠে চন্ডী পাঠ শুনে মুগ্ধ হয়েছিল আমেরিকা প্রবাসী বেশ কিছু বাঙালি তরুণ তরুণী।। তাঁর লেখা বিভিন্ন বিষয়ের প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

        ৬ই মে ২০২১এর দুপুরে তিনি চলে গেলেন অমৃতলোকের পথে, হয়তো আরোও কোন বড় কাজের দায়িত্ব নিতে। তাঁকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

 

লোপামুদ্রা সিংহদেব। (সদস্য, জামশেদপুর শাখা।)

আমার কবি নজরুল/বিকাশ দাস

 আমার কবি নজরুল/বিকাশ দাস 


চিরদিনের বাঙালি বাংলা ভাষার তুমি পূজারী


আকাশ-অরণ্য-প্রকৃতিমগ্ন ছন্দের অধিকারী


ঘাত প্রতিঘাত দ্রোহের উতরোলে কাজী, মশগুল  


সাম্যের কবি মানবতা-দরদি,বিদ্রোহী কবি নজরুল।  


বেঁধেছ শব্দের অসিতে,রণরণিত স্বাধীন কণ্ঠস্বর।


সৃষ্টি-সুখের-উল্লাসে সর্বহারার অখণ্ডতার চরাচর  


শব্দের প্রসূত এক অভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায় জাতপাত  


পৃথিবীর গোলা ভরা ধান।মানুষের রক্তশ্রমের বরাৎ।  


ধৈর্যশীলতা প্রেম ভালোবাসার শুদ্ধতম বলিদান


মানুষের হৃদয় অন্তরে নজরুল আজও অস্তিমান।


কাগজে কলমে যদিও দেখেছি মাটির বিভাজন।


শব্দ ছন্দের পরাগে পরাগে করেছ অসাধ্য সাধন


সোয়াস্তি-স্বরাজ-আত্মদান মানুষ মানুষের বাঁধন।   


ক্ষুধার অন্নে প্রাণের ঘ্রাণ দু’মুঠো ভাত একটু নুন


অন্তরে অন্তরে আগুনের আতরে জ্বালিয়ে উনুন।


এক হাতে বাঁশের বাঁশরী আর এক হাতে রণ-তুর্য


প্রেম-পীড়ন-তৃষ্ণার অলঙ্কার। বিপ্লব সমুদ্ধত সূর্য।   


চির-উন্নত শির প্রাণখোলা হাসি মৃত্যুর পরাজয়  


শব্দের সমৃদ্ধিতে শত্রুর কোলাকুলি প্রাণবন্তময়।    


বেলা শেষে শাস্ত্র পুঁথি গ্রন্থ দুর্গতির পাতার দর্প ছিঁড়ে


যাপন ভ্রমণ হোক আকাশ খোলা সত্য সংসার-নীড়ে।  


কাব্যের নিভৃতে ধরেছ আকাশ প্রকৃতির সবুজ হাওয়া


মনুষ্যত্ব সর্বশক্তিমান, দু’চোখে বাঁধলে অভয় চাওয়া।    


শব্দে চেতনা জাগিয়ে বলেছ অদৃষ্টের কঙ্কালে


বৃথা খুঁজিস তোর ঠাকুর। সে তোরই অন্তরালে।  


বুকের পাঁজরে শ্রেষ্ঠ রত্নবৎ হৃদয় এক খানা


মন্দির-কাবা ঈশ্বর-খোদা পাথর সবার জানা। ।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ জন্মবার্ষিকী তে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি


 বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের  ১২২ জন্মবার্ষিকী তে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রয়াত সন্তোষ চক্রবর্তী (মানিক), ভাগলপুর

 

সন্তোষ চক্রবর্তী (মানিক) প্রয়াত হলেন। প্রায় গত ১৫ দিন থেকে নার্সিং হোম এ ছিলেন।  শেষে ÀMRI তে ভর্তি করানো হয় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট ও হয়ে গিয়েছিলো । ২৩।০৫।২১ সকালে ৮ টা নাগাদ massive heart attack এ মারা যা। খুব দুঃখ জনক ঘটনা। জানিনা আরও কত নিকট জন কে আমরা এই মহামারীতে হারাবো। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি সবাইকে জানো সুস্থ ও ভালো রাখুক। ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি ও প্রার্থণা করি এই কঠিন সময়ে পরিবারের সকল সদস্যদের শক্তি প্রদান করুন।

জয়জিৎ ঘোষ ও অম্লান দে, ভাগলপুর।

প্রয়াত গোপাল চন্দ্র লালা

 বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের সহ সভাপতি গোপাল চন্দ্র লালা ৮২ বছর বয়সে চিরতরে জন্য ঘুমের দেশে চলে গেলেন ।বাহির্বঙ্গে বাংলা ভাষা, সাহিত্যের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন গোপাল বাবু । ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড স্বতন্ত্র রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় ।সেই সময় কেন্দ্র, বিহার ও নব গঠিত ঝাড়খন্ড রাজ্য কে নিয়ে গঠিত হয় ঝাড়খন্ড বিষয়ক ত্রিপাক্ষিক সমিতি । ওই সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, অবিভক্ত বিহারে যেসব নিয়ম ও সুবিধা চালু আছে সেগুলি নব গঠিত ঝাড়খণ্ডে বলবৎ থাকবে । সেই সুবাদে এখানে বিহারের আদলে বাংলা একাডেমি গঠন করা উচিত ছিল ।সেই সময় চক্রান্ত চালিয়ে এক শ্রেণীর আমলারা স্থানীয় এমএলএ ও মন্ত্রীদের কাঁধে ভর করে বাংলা একাডেমি গঠনের প্রস্তাবটি হিমঘরে পাঠিয়ে দেন । সেই সময় অর্ধেন্দু সেন, গোপাল চন্দ্র লালা ও রাঁচির বিশিষ্ঠ নাগরিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, লেখক, কবি মিলে নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন বাংলা একাডেমি ঝাড়খন্ড । বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি, ঝাড়খণ্ডের স্টেট সেক্রেটারি ও বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের আজীবন সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় ,একাডেমির সম্পাদক মৃগেন্দ্র বিশ্বস ,পূর্ব সহ সভাপতি ডা  গণেশ প্রাসাদ বসু মল্লিক, ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতির সভাপতি বিদ্রোহ মিত্র, ডোরান্দা কলেজ রাঁচির অধ্যাপক ও সাহিত্যিক ড. গৌতম মুখার্জি, জাতীয় শিক্ষক সম্মানে সম্মানিত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ভারতী চট্টোপাধ্যায় ও লেখক-কবি রাজকুমার সরকার , গোপাল বাবুর প্রয়ান কে রাজ্যের ভাষা সংস্কৃতির উন্নয়নে অপূরণীয় ক্ষতি বলেছে ।



রাজা রামমোহন রায়

 আজ ২২শে মে, ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায়ের সার্ধ দ্বিশত জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাকে জানাই অন্তরের সশ্রদ্ধ প্রণাম।


ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের 

যে সামঝংকার দিক্ বিদিক্ করেছিল মুখরিত, তার মর্মে ছিল বাঙালীর সাধনা। এই সময়ে যে সব বাঙালী মনীষীউজ্জ্বল নক্ষত্রে উজ্জ্বলিত হয়েছিল দেশ বিদেশের চতুর্দিক সে সব উজ্জ্বল নক্ষত্রের অন্যতম উজ্জ্বল সমুজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন রাজা 

রামমোহন রায়।  ২২ মে তারিখে তাঁর জন্মদিন। 

এই নবজাগরণের অগ্রদূত,  প্রবন্ধকার, সমাজসংস্কারক, ব্রহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা,  সতীপ্রথা বিলুপ্তিকরণে বিখ্যাত, প্রথম বিদেশযাত্রী অগাথ পাণ্ডিত্যে পণ্ডিত ও প্রতিভাধর রাজা রামমোহন রায়কে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।

তপন রায়, ধানবাদ

প্রয়াত গোপাল রায়

 আমাদের গোপী দা আজ আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে অনেক দূর চলে গেলেন। এটা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, তা বোধ হয় কোন দিন পূরণ হবে না। গত ১লা বৈশাখ  একসাথে হরিসভা স্কুল প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ছিলাম। জানতাম না এইটাই শেষ দেখা। 



ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

শুভাশীষ বোস

আমাদের সকলের প্রিয় গোপী দা । সব মঞ্চে উঠে সবার মন জয় করে নিয়ে ছিলেন যিনি। প্রকৃত Allrounder সেই গোপাল রায়, যিনি বিহার বাঙালি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন  উপ সভাপতি ও ছিলেন। আজ সন্ধায়  তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে  ইহলোক হইতে বিদায় নিলেন। ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তির কামনা করছি।



রাণা কর্মকার


প্রয়াত জ্যোতি প্রকাশ পাল মহাশয়

 বিহার বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশন, মুঙ্গের শাখার তরফে অত্যন্ত দু:খের সাথে জানানো হচ্ছে যে  মুঙ্গের শাখার প্রাক্তন উপ- সভাপতি শ্রদ্ধেয় জ্যোতি প্রকাশ পাল মহাশয় ( যিনি মহান শিল্পী, ভারতের রত্ন আচার্য নন্দলাল বসুর শ্যালক-পুত্র ) এবং হাবেলী - খড়গপুরের সদস্য, সন্জীব পাল‌ মহাশয় গত ১০ই মে, ২০২১ পরলোকগমন করেছেন এবং মুঙ্গের তারাপুর উপশাখার মোহনগঞ্জের বরিষ্ঠ সদস্য, মাননীয় অনন্ত কুমার ঘোষ মহাশয় গত ১১ই মে ২০২১, পরলোকগমন করেছেন । আমরা সকল স্বর্গীয় আত্মার প্রতি দু:খ - সমবেদনা প্রকাশ করছি আর সকল সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি এই  সময় আন্তরিক সমবেদনা এবং সহযোগিতা প্রকাশ করি !! 

আমরা  ভগবানের কাছে মৃত আত্মার শান্তি কামনা করি ।

কেন্দ্রীয় শাখার Zone-2 র উপ সভাপতি শ্রী ফাল্গুণী মুখার্জ্জী ও কার্মিক সম্পাদক আশীষ কুমার কর্তৃক মিডিয়া সূত্রে পরিবেশন করা হল ।।

গোপাল চন্দ্র লালা– জ্ঞান ও বিনয়ের এক বিরল প্রতিমূর্তি : গৌতম চট্টোপাধ্যায়, দুমকা

 গোপাল চন্দ্র লালা– জ্ঞান ও বিনয়ের এক বিরল প্রতিমূর্তি :

 গৌতম চট্টোপাধ্যায়, দুমকা

শেষ রক্ষা হল না। একদিকে নিরাময়ের লক্ষ্যে নিরন্তর প্রার্থনা অন্য দিকে বিজ্ঞানের যারপরনাই আয়োজন, সব সরিয়ে দিয়ে প্রকৃতির আইন নিজস্ব রায় ঘোষণা করে দিল।সেই আইনের ধারায় অনন্ত কালের সময় কারও কপালে বরাদ্দ নেই।বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের উপাধ্যক্ষ ও একনিষ্ঠ কর্মী গোপাল চন্দ্র লালা চিরতরের জন্য ঘুমের দেশে চলে গেলেন ।

 


তার ছিল   বৈচিত্রময় ব‍্যক্তি-জীবন। পারিবারিক আদি নিবাস –বিহারের বড়কী বিহারী গ্রাম। সেই সূত্রে মাতৃভাষা ভোজপুরী। আবার পূর্ব পুরুষের পূর্ব বঙ্গে অবস্থানের প্রেক্ষিতে জন্ম সেখানে(২২শে নভেম্বর ১৯৩৪,নিজস্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী)। স্কুল শিক্ষাও বাংলা ভাষায়, সেইখানে।দেশ ভাগের সময় পরিবারের সাথে এপারে চলে আসা এবং বিহারে শিক্ষা গ্রহণ। পরবর্তীতে ভারতীয় রাজস্ব বিভাগের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক হিসেবে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান। দীর্ঘ সময় উড়িষ‍্যায় বসবাস। মাতৃভাষা ভোজপুরী ছাড়াও বাংলা, হিন্দী,ওড়িয়া ও ইংরেজী চারটি ভাষায় অকল্পনীয় দক্ষতা।আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, সেখানকার সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, লোকাচার বিষয়ে গহন অধ‍্যয়ন,চর্চা ও আত্মিকরণ অবলীলায় যেন করে ফেলেছেন। অসামান‍্য স্মৃতির জোরে মানুষটি ছিলেন যেন সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের এক চলমান বিশ্বকোষ। উপরন্তু বহু বর্ণচ্ছটায় উদ্ভাসিত মানুষটির ব‍্যক্তিত্ব। বিভিন্ন রচনায়–গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, বিভিন্ন সমারোহে বক্তৃতায় যুক্তিবাদি মন ও বিজ্ঞান মনস্কতাকে উজাড় করে গেছেন আমাদের লালাবাবু।

   বিদ্বজ্জন ঠিক কথাই বলেন, যে গাছে যত বেশী ফল ধরে, সে গাছ তত বেশী ঝুঁকে পড়ে।জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শিল্পসত্তা ও মানবতাবাদের প্রতিমূর্তি গোপাল চন্দ্র লালার মত বিনয়ী ও মাটির কাছাকাছি মানুষ সমাজে বিরল। এই মানুষটির সান্নিধ্য পাওয়া নিজের গৌরব। অঙ্গীকার করি, যেন এই গৌরব সযত্নে রক্ষা করে চলি।বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি, ঝাড়খণ্ডের স্টেট সেক্রেটারি ও বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের আজীবন সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় গোপাল বাবুর প্রয়ান কে রাজ্যের ভাষা সংস্কৃতির উন্নয়নে অপূরণীয় ক্ষতি বলেছে ।

কোভিড - ১৯: আবেদন: বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, দিল্লী

 সুধী,

সারা বিশ্ব এখন অতিমারীর প্রকোপে জর্জরিত। প্রতি মুহুর্তে ভয়াবহ দুঃসংবাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমগ্র বিশ্ব তৎপর হয়ে উঠেছে। 

বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, দিল্লীর কার্যকরী সমিতির সমগ্র সদস্যরাও এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনায় ব্রতী হয়েছেন।



যদিও আমাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত,তবে উদ্যম অসীম। তাই,এই উদ্যোগকে সফল করার জন্য, বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, দিল্লীর  সাধারণ সম্পাদক, শ্রী তপন সেনগুপ্ত মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে একটি স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠন করা হয়েছে। যদিও আমরা শারীরিক রূপে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে অক্ষম ( বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য) তবুও আমরা সর্বতোভাবে আপনাদের সহযোগীতায় প্রস্তত। আপনাদের সাহায্যার্থে, আমরা একটি "কোভিড সহায়তা কক্ষ" আরম্ভ করেছি। এই কক্ষের স্বেচ্ছাসেবকরা উপরোক্ত  digital mode এর মাধ্যমে আপনাদের বর্তমান পরিস্থিতি - যেমন   availability of oxygen, Doctors, tiffin and food, ambulance   ইত্যাদি বিষয়ে   আপনাদের অবগত করাবেন। আপনাদের কাছে যদি এই ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে, আপনারাও সেই তথ্য, উপরোক্ত link(Google form) এর মাধ্যমে আমাদের পাঠাতে পারেন।

আপনাদের সবার কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, আপনারা সবাই সক্রিয় ভাবে এই উদ্যোগে ,বিভিন্ন সূত্র থেকে নেয়া তথ্য verify করে, আমাদের  উপরোক্ত Google form এর মাধ্যমে  post করুন ও সেই সম্মিলিত তথ্য , আমাদের website, Facebook, social platforms এর link সবার কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করুন।

আমাদের সীমিত ক্ষমতা, আপনাদের সম্মিলিত শক্তি ও সকলের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা, এই বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিকে নিশ্চয়ই পরাজিত করবে।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।


সুপর্না মুখার্জি 

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক 

সমাজ সেবা বিভাগ। 

বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, দিল্লী

১৯'শে মে...বরাক উপত্যকার ভাষাশহীদ দিবস: শ্রদ্ধাঞ্জলি: তাপস মাইতি


 

আসামের ভাষা আন্দোলনের ’শিক্ষা ও আহ্বান': নীতীশ বিশ্বাস।

 আসামের ভাষা আন্দোলনের ’শিক্ষা ও আহ্বান'

 নীতীশ বিশ্বাস।

১৯৬১সালে আসামে জোর করে বাংলাভাষা কেড়ে নিয়ে অসমিয়া চাপিয়ে দেবার বিরুদ্ধে ১৯শে মে বাংলা ভাষী বরাকবাসী সত্যাগ্রহ প্রতিরোধ আন্দোলনে সামিল হন।প্রবল জনজোয়ার ওঠে হাইলা কান্দী, করিমগঞ্জ ও শিলচরে । শিলচর রেলস্টেশনে অহিংস সত্যাগ্রহীদের পরে নির্বিচার গুলি চলে। একদিনে ১১জন শহিদ হন। যারা হলেন বিশ্বর ভাষা আন্দোলনের প্রথম নারী শহিদ মাত্র ১৬বছর বয়সের কুমারী কমলা ভট্টাচার্য, ২০ বছরে ছাত্র শচীন্দ্রনাথ পাল,   ১৫ বছরের ছাত্র ও সামান্য স্টেশনারী  দোকানের মালিক সুনীল কুমার সরকার, সদ্য  বিবাহিত বীরেন্দ্র সূত্রধর;  রেলবিভাগের কর্মী ও বাম পন্থী ইউনিয়নের স্থানীয় নেতা কানাইলাল নিয়োগী, সাহসী,পরোপকারী আর ভয়ানক দরিদ্র, বয়ণ শিল্পী সুকমল পুরাকায়স্থ, দারুশিল্পী চন্ডী চরণ সূত্রধর, অবিবাহিত দেশপ্রেমিক যুবক  সত্যেন্দ্র দেব, উদ্বাস্তু জীবনের ঘূর্ণাবর্তে ত্রিপুরা হয়ে শিলচরে কাপড়ের দোকান-কর্মী হীতেশ বিশ্বাস, শৈশবে মাতৃহারা ও মামার চায়ের দোকানে সহকারী কুমুদ রঞ্জন দাস, এবং বয়ন সমিতির সম্পাদক তরণী দেবনাথ। এদের রক্তে রঞ্জিত পথে আসে ১৯শে মের সাফল্য। শেষ পর্যন্ত আসামে দ্বিতীয় রাজ্য ভাষার মর্যাদা পায় বাংলা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পদে পদে চক্রান্ত চলতেই থাকে যা আজ বিজেপির মদতে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। এখন বাঙালিকে তার ন্যুন্তম নাগরিক অধিকার পর্যন্ত হরণের সব ধরণের চক্রান্ত চলছে।যার বিরুদ্ধে চাই ভারত ব্যাপী বাংলা ভাষী ও গণতান্ত্রিক মানুষের  মহান ঐক্য ।

 এই প্রেক্ষিতে বলতে চাই  অনেক ‘মহান বাঙালি’ আমাদের  বাংলাভাষা প্রেমকে সংকীর্ণ ভাবেন। তারা ২০২১শে এসেও ভেবে দেখেন না, মায়ের ভালবাসাও বাইরের থেকে দেখলে সংকীর্ণ মনে হতেপারে। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে যেমন দেশ-প্রেমকে অনেকে সংকীর্ণ বলেন।আজ যারা বাংলা দেশের সমর্থক তারা মুক্তি যুদ্ধের আগে কি বলতেন বা ভাবতেন মনে করুন। যা বুঝতে চান না  কেবল উদারতা নামক উদরাময় রোগাক্রান্ত ও দেশপ্রেমহীন কিছু  স্বার্থপর লোকেরা । তারা যখন ভাষা আগ্রাসনের সামনে পড়েন তখন যেনো তাদের কন্ঠে আর জোর  থাকে না । তাই আজও যে    বাংলা ভাষার জন্য কেন্দ্রের বাজেটে কোন বরাদ্দ নেই ; তাও কোন বাঙালি সাংসদের গলায় একটি শব্দ  ফোটে না। নিয়ম থাকলেও এন সি ই আর টির (NCERT)বই বাংলায় এই ৭০ বছরে  ছাপা হলনা । কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে নানা অজুহাতে  বাংলা পড়ানোর কোন ব্যবস্থাই হল না। রাজ্যে রাজ্যে বাংলা স্কুল উঠে গেল । আকাশবাণীর দিল্লী ও কলকাতা কেন্দ্রের বাংলায় জাতীয় খবর সম্প্রচার বন্ধ হোল। দূরদর্শনে হিন্দিতে অযুত চ্যানেল থাকা সত্ত্বেওকলকাতার দূরদর্শনের প্রাইম টাইমে নানা অজুহাতে প্রতি বছর বাংলা অনুষ্ঠান কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যারা এসব বিষয় জানেন তারা ব্যক্তিস্বার্থে কথা বলেন না । রবীন্দ্র-নজরুলের ঐতিহ্য বিরোধী দিল্লীর  নানা “ডেমি-পুরস্কারলোভী” তথা এই  মৌলোভীরাই  বাংলার বুদ্ধিজীবী কুলের উজ্জ্বল(!)তিলক। এই অবস্থায় আমাদের চোখের সামনে দন্ডকারণ্যের গোটা ৫০০ বাংলা স্কুল হারিয়ে গেল। বড় বড় শহরে বনেদী বাংলা স্কুলের কঙ্কাল দাঁড়িয়ে থাকলেও বাংলা হীন সে সব বাংলা স্কুল বাঙালির প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।  আসামে ১৯শে মের যে অর্জন ছিল  তাও যে  নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে;  তা যেনো উচ্চারণেই পাপ। এমন কি রবীন্দ্র নাথের বিশ্বভারতীতেও বাংলা আজ পদে পদে  আক্রান্ত । কিন্তু কোন দলের মহান নেতারা যেনো  কিছুই জানেন না।  যেমন প্রথম হটাৎ দেওয়া লকডাউনের আগে   পরিযায়ী শ্রমিকের কথা মোদিজি ভুলেই ছিলেন। যেহেতূ বাঙালি ছাড়াও নানা ভাষীরা সে দলে ছিলেন  তাই মিডিয়ায় একটু শোরগোল হল ।কিন্তু   আন্দামানে সঠিক-জনসংখ্যার  ৬৪% বাঙালি হলেও সেখানের  প্রশাসনিক ভাষা ১৯৮৭থেকে হিন্দি হয়ে গেল।সেখানেও  বাংলাভাষা প্রায় নিশ্চিহ্ন।  ঝাড়খন্ডে ৪২% বাংলাভাষী হলেও একরাত্রির ফরমাণে বাংলা মাধ্যমের ৯০হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে হিন্দী মাধ্যমে ঠেলে দিলো বিজেপি সরকার।বাংলা স্কুল হীন এখন ওড়িষা থেকে উত্তরপ্রদেশ-এমনি ভয়াবহ সে অবস্থা সারা ভারতে । কিন্তু আমাদের বেদনা অন্যরাজ্যেই নয় এই বাংলায়ও এখন বাংলাচর্চা নিম্নমুখী।নতুন সরকার এসেই ব্লকে ব্লকে ইংলিশ (মূলত হিন্দি-ইংরেজি)স্কুল খোলার ঘোষণা দিলেন ।বললেন না বাংলা স্কুল গুলির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিইয়ে আনার কথা। 

আসামে সাত দশক ধরে বাঙালি নিধন-নির্যাতন ও বিতাড়ন চলল, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ওখানের কত বামপন্থীরা প্রাণ দিয়েছিলেন । তার পরও বাংলার বনেদী সব পার্টি আর তার  মহাপ্রাণ নেতারা এই সংকীর্ণ বাঙালিরক্ষার রাজনীতি করতে এগিয়ে এলেন না ।আসলে তাদের কত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে  ভাবতে হয়,এসব তুচ্ছ বিষয় চর্চার সময় কোথায় ?!

 তাই ঐসব  হৎভাগ্য ভাই বোনের কথা  আমাদেরর মনেও আসেনা । আর ভোট–সর্বস্ব রাজ নৈতিক দলগুলি দেখলো এদের তো এখানে ভোট নেই, এসব সর্ব ভারতীয় অবান্তর  বিষয়ের দায় তো সর্ব ভারতীয় কমিটির বা কেন্দ্রীয় কমিটির। আর সে সব কমিটির বাঙালি সদস্যরা এতোই দলানুগত যে এই সব সংকীর্ণ ইসু তোলার মতো ‘মূর্খ-সদস্যের অভাব হইল’।শুধুকি তাই  কলাটা মূলোটার উজ্জ্বল চেহারা দেখে  সে সব   কথা বলার যেনো মনোবলই তারা পেলেন না ।তাই রাজ্য ও কেন্দ্রে বাংলা ভাষা ও বাঙালিরাই ভারতে আজ সবচাইতে অবহেলিত।কবির ভাষায়,“বাংলা ভাষা জননী, তুমি  এদেশে সন্তান হীনা” ।

  ভারতে অধিকাংশ রাজ্যে সেই সেই  রাজ্যের প্রধান ভাষা স্কুলস্তরে আবশ্যিক ।কেবল বাদ এই রাজ্য। সম্প্রতি কেরলও তা করল। কিন্তু আমাদের বিধায়ক-সাংসদেরা অধিকাংশই  সেসব তথ্য সঠিকভাবে  জানেন না। আর  তারা জানেন না নিজেকে ছাড়া  কাকে ভালোবাসেন সে কথাও। নিজের কেরিয়ারের জন্য তারা আন্তপার্টি সংগ্রাম করে তার ন্যায্যদাবি বের করে আনার মতো  তাত্ত্বিক ও তাথ্যিক শক্তিধর  নন অথবা ব্যক্তি স্বার্থে সে  ইচ্ছেও  তাদের মনে হয়তো আসে না । না হলে সোমনাথ  লাহিড়ী ১৯৬৩ সালে বিধান সভায় যে দাবি করতে পারেন তা এযুগের  কোনো দলের কোনো নেতা তা তুলতে পারেন না ? এমন কি, “ ২০১৭ সালের ১২ই মে ( সামনে ১৯শে মে ছিলো, আর আমাদের মতো সংগঠন সমূহের লাগাতার দাবিতে)  মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন অবিলম্বে রাজ্যের সব মাধ্যমের( হিন্দি-ইংরেজি সহ )বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত একটি বিষয় আবশ্যিক ভাবে বাংলা করা হল ”। আমরা আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি পার্বত্য জেলা পরিষদ বাদে এই আইনের নির্দেশিকা  প্রকাশ করা হোক। কিন্তু মাননীয়া কিভাবে আর কেনো যে সে সব ভুলে গেলেন তা আজও জানিনা । আর বিরোধীরা রাজ্যের সার্বিক স্বার্থে  নানা ইসুতে নবান্নে গিয়ে পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে আসেন, এক্ষেত্রে এই হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থান জিগিরের বিরুদ্ধে কেনো মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকরী করার জন্য সেদিন তারা দাবি জানালেন না ? 

 শাসক ও বিরোধী দলের সবাইকে আবেদন অবিলম্বে  রাজ্যের সম্প্রীতির সার্বিক স্বার্থে  আমাদের  দাবিগুলি গ্রহণ করুনঃ ১। স্বশাসিত জেলা বাদে রাজ্যের প্রধান ভাষা বাংলা আবশ্যিক ভাবে সমস্ত ধরনের স্কুলে পাঠ্য করতে হবে. ২। কেন্দ্রীয় স্কুল সহ কেন্দ্র-অনুমোদিত সমস্ত স্কুলে বাংলা পড়ানোর সুযোগ দিতে হবে।৩। রাজ্যের সমস্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরে এমন কি বেসরকারী দপ্তরে এরাজ্যের বাংলা জানা প্রার্থীদের চাকুরি দিতে হবে।৪।সাইন বোর্ডসহ সমস্ত জনসংযোগের  কাজে বাংলা আবশ্যিক করতে হবে। ৪। রাজ্যের চাকুরি ও জয়েন্টের সমস্ত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র  বাংলায় দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।৫।রেডিও- টিভিতে বাংলা-অনুষ্ঠানের সময় বাড়াতে হবে। ৬। দিল্লীসরকারের  মতো রাজ্যের সমস্ত সরকারী  স্কুলের উন্নতি বিধান করতে হবে। কোন অজুহাতে বাংলাস্কুল বন্ধ করা চলবে না।                                                                               তবে আমরা পরিস্কার ভাবে একথা বলতে চাই যে, সারা রাজ্যে বিশেষ করে যে ভিন্ন রাজ্যের ও ভিন্নভাষী যারা আছেন তাদের  এরাজ্যে শান্তিতে থাকার ও  সম্প্রীতির বাতাবরণ জোরদার করার পক্ষে আমরা । তবে  গুজরাট থেকে কাশ্মীরী (পশ্চিমা) ধনিক রাজনীতিকদের  চক্রান্তে দেশভাগের নিষ্ঠুর-বলী বাঙালি, তাদের নাগরিকত্বের নামে বিজেপির অত্যাচার বন্ধ হোক।, রবীন্দ্র-নজরুলের ভাষা তথা পৃথিবীর ৪র্থ ভাষার  পক্ষেআমরা ।আমাদের  সমাজ জীবনের ভাষা হোক বাংলা।   ভাষার ক্ষেত্রে আমরা  অন্য কোন  ভাষা বিদ্বেষী নই । আমাদের ঐতিহাসিক  ডাক ," নিজের মাতৃ ভাষাকে ভালবাসো, আর অন্যের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা কর।"-আমরা সেই পথেই চলছি। আপনিও স্বাগত।১০৭৭শব্দ ।

 *সম্পাদক,সর্ব ভারতীয় বাংলা ভাষা মঞ্চ, সহমর্মী, ঐকতান গবেষণা পত্র Ph: 9330961824  ।

১৯ মে, ১৯৬১ সাল। অসমের বরাক উপত্যকা।

 ১৯ মে, ১৯৬১ সাল। অসমের বরাক উপত্যকা।




প্রণামঃ 


কমলা ভট্টাচার্য, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, হিতেশ বিশ্বাস, চন্ডীচরণ সূত্রধর, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ। …


আলো রায়, পূর্ণিয়া

প্রয়াত সাহিত্যিক শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রয়াত সাহিত্যিক শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৪। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিসে ভুগছিলেন শীর্ষ। গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়ও ছিলেন তিনি।


সোমবার রাতেই ফেসবুকে জলরঙে আঁকা কালো আকাশের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলে, ‘ওরে ঝড় নেমে আয়।’ এরপর ভোরের দিকে বাথরুমে যান তিনি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ সেখান থেকে না বেরোনোয় সন্দেহ হয় পরিবারের tসদস্যদের। সকালে বাথরুমের দরজা খুলে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন মেয়ে। চিকিৎসকরা এসে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস শার্দূলসুন্দরী। এই উপন্যাস বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর একের পর এক উপন্যাস, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। তাঁর জনপ্রিয় গ্রন্থগুলি হল- স ন্ধ্যা রা তে র শেফালি, ইথারসেনা, জলের ওপর দাগ, রমণীরতন।

সাহিত্যিক ছাড়াও সাংবাদিক হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল এবং জার্মান রেডিওর বাংলা বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪। শার্দূলসুন্দরীর জনপ্রিয়তার কারণে এই উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার সাহিত্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তাঁর প্রয়াণে কলকাতা প্রেস ক্লাব থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। শোকবার্তায় লেখা হয়েছে, প্রেস ক্লাব, কলকাতা এই উদীয়মান সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের অকাল প্রয়াণে তাঁর পরিবার ও সতীর্থদের আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

এই লেখাটি প্রয়াত সাহিত্যিক শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও কাজের পরিচয় জ্ঞাপক।

সকলে শোকস্তব্ধ অকাল প্রয়াণে।

অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই তাঁর স্মৃতির প্রতি।

অজয় স্যানাল

রক্তদান

 বিহার বাঙালি সমিতির সদস্য রাহুল দাস  (বেলোরি,পুর্নিয়া ) থ্যালাসেমিয়া রোগে গ্রস্ত ব্রজেস কুমার এর জন্য (সিফাহি টোলা, পূর্ণিয়া ) o+ রক্ত গত ৩০।০৪।২০২১ এ দান করেছেন , ব্রাজেস কুমারের স্বাস্থ্য কামনা করি এবং রাহুল দাস কে সমিতির পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই মানবিক কাজের জন্য।



প্রতিবেদন - নারায়ণ চন্দ্র দাস

লহ প্রনাম হে বিশ্বকবি: মিলন মিশ্র

 লহ প্রনাম হে বিশ্বকবি

 (বিশ্ব কবির ১৬০ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন)


লহ প্রণাম হে বিশ্বকবি তুমি

লহ প্রণাম হে রবিঠাকুর তুমি

লহ প্রনাম আমার

লহ প্রণাম আমাদের সবার

তুমি এত কিছু দিয়ে গেছ আমাদের

তুমি কত কিছু দিয়ে গেছ আমাদের

তুমি দিয়ে গেছ কত সুর  কত গান

কত গল্প কত ছন্দ আর শিশিরের আঘ্রাণ

আমরা আজও পারিনি সব গান গাইতে 

পারিনি আমরা তোমার সুরে সুর মেলাতে 

আমাদের বাড়ির মিনী আজও

নিজেকে খুঁজে পায় নিজেকে খুঁজতে চায় তোমার সেই মিনীর মধ্যে 

মনে মনে সে অপেক্ষা করে 

কোনো এক কাবুলিওয়ালার

সেই কাবুলিবালার লম্বা ঝুলির 

আর সেই ঝুলির ভেতরের

মিনীর জন্যে আনা সেদিনের উপহারের 

বিনোদিনী মহেন্দ্র কি বিনয় সুচরিতা 

আজও আছে এপাশে ওপাশে আমাদের আনাচে কানাচে

তোমার গল্পের গুচ্ছ কই তাও হয়নি এখনো ভালো করে বোঝা 

সমস্ত কবিতা আবৃত্তি করে উঠতে পারিনি আজও আমরা

তবে  আজও আবৃত্তিকারের আবৃত্তির প্রথম প্রেম 

“প্রানের বাসনা প্রানের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি”

এযে নির্ঝরের স্বপ্ন ভাঙিয়ে দেওয়া প্রেম

রোমাঞ্চিত হয়ে নতুন প্রজন্মের বীরপুরুষরাও যখন মা শোনান

......“আমি যাছি রাঙ্গা ঘোড়ার পরে টগবগিয়ে তোমার পাসে পাসে...”

......“ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে...”

প্রজন্ম নির্বিশেষে আজও শিশুরা তোতলায় 

“...তালগাছ তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে ...”

আর ঘুমন্ত শিশুও ওই মহাকাশে উঁকি মেরে রাত্তিরে তোমাকে খুঁজতে চায় 

তোমার সাহিত্য সৃজন আর তার সম্ভার

নানান রঙের সুবাসী পুষ্পের শুধুমাত্র একটি পূজার ডালি যে নয় 

এ যে সুবাসী পুষ্পে ভরা এক উপবন 

দিব্য এক অঞ্জলিপূর্ণ নিবেদন

গবেষণা চলবে অনন্ত কাল  


হে অবিসংবাদি সাহিত্য সম্রাট 

তুমি তো উর্ধ্বে সব পরিভাষার

আর আমাদেরও ভাষা কই 

তোমায় সঠিক পরিভাষা দেবার

তাই থাক  না ব্যতিক্রম

তুমি থাক আমাদের মাঝে এক প্রবাহ হয়ে

এক স্পন্দন এক গুঞ্জন এক প্রবহমান চিন্তন হয়ে 

আর প্রবাহ মানে না কোনো সীমানা

তুমি থাক চিরকাল হয়ে এক অন্বেষণ

এক অজানা এক আনকোরা অন্বেষণ

শান্তিনিকেতনের প্রতিটি বৃন্ত  আর প্রতিটি পুষ্পের মাধ্যমে

গীতাঞ্জলীর প্রতিটি ছন্দের মাধ্যমে

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি

আর জন গণ মনর প্রতিটি মানুষের মাধ্যমে

হে কবিগুরু আজি এ জন্মদিনে লহ অজস্র অভিনন্দন

হে বিশ্বকবি তুমি লহ প্রনাম তুমি লহ প্রণাম


মিলন মিশ্র

"চিত্রদীপ"

উত্তরায়ন , বাঁকুড়া

২৫শে বৈশাখ ১৪২৮

প্রয়াত : অঞ্জলী ভট্টাচার্য

ঝাড়খণ্ড বাঙালি সমিতির জামশেদপুর শাখার একনিষ্ঠ কর্মী অঞ্জলী ভট্টাচার্য্য চিরতরের জন্য ঘুমের দেশে চলে গেলেন । উনি বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি, ঝাড়খণ্ড এর স্টেট সেক্রেটারি গৌতম চট্টোপাধ্যায় শোক ব্যক্ত করে বলেছেন, ওনার প্রয়াণ সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি ।



প্রতিবেদন - গৌতম চট্টোপাধ্যায়

বিহার বাঙালি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুনির্মল দাশ সমিতির পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেন ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনা জানান। অবিভক্ত বিহার বাঙালি সমিতির সম্মলনে তিনি পাটনা ও অন্যান্য শাখার বৈঠকে যোগদান করেছেন। তাঁর উদ্যোগে কর্মাটাঁড় বিদ্য়ালয়ে মিড ডে মিল শুরু করা হয়েছিল। তাঁর ছেলের মাধ্যমে "অগ্রণী" আমেরিকা সংস্থার থেকে অনুদান সংগ্রহ হয়েছিল।  


রবীন্দ্র জয়ন্তী : রানিশ্বর ব্লকের সাদিপুর এর মিডিল স্কুলে

 দূমকা( ঝাড়খণ্ড) । রানিশ্বর ব্লকের সাদিপুর এর মিডিল স্কুলে রবিবার ২৫ শে বৈশাখ একটি সাদা মাঠা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল রবীন্দ্র জয়ন্তী । বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অধ্যাপিকা মিতালী চ্যাটার্জি, তুহিনা অধিকারি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিতে মাল্যারপন করেন ।২০১৭ সালের ২৫ বৈশাখ ভারপ্রাপ্ত প্রধান অধ্যাপিকা , স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসী দের প্রচেষ্টায় স্কুল চত্বরে কবি গুরুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় । মূর্তির টি অনাবরণ করেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের   সদস্যা বেবি সরকার, শিকারিপাড়া বিধানসভার স্থানীয় এম এল এ নলিন সরেন শিক্ষা বিভাগের আধিকারিক । এবার কোরনা সংক্রম এর ভয়াবহতা ও  কোভিড এর গাইড লাইন কে অনুসরণ করে জয়ন্তী পালন করা হয় ।


প্রতিবেদন - গৌতম চট্টোপাধ্যায়

কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকী: বিহার বাঙালি সমিতি বরারী শাখা

 বিহার বাঙালি সমিতি বরারী শাখার পক্ষ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান আজ কভিড এর বিধি অনুসরণ করে  বিহার বাঙালি সমিতি বরারী শাখার প্রেসিডেন্ট এর বাসভবন ছোট্ট খঞ্জরপুর অবস্থিত সিনহা বাড়ীর প্রাঙ্গণে পালিত করা হয়। বিহার বাঙালি সমিতি  কেন্দ্রীীয় সমিতি যুগ্ম সচিব  শ্রী তাপস ঘোষের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। এই উপলক্ষে উপস্থিত সকল সদস্য প্রতিমাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং মাল্যদান করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।







 এই উপলক্ষে বরারী শাখার সভাপতি শ্রী তরুণ ঘোষ, রঙ মহোৎসব কমিটির আহ্বায়ক দীপক মন্ডল, শ্রী অশোক সরকার, সহ সম্পাদক শ্রী শান্তনু গাঙ্গুলি, সিনহা বাড়ীর শ্রী অমিত সিনহা, বিহার বাঙালি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি শ্রী সুবোধ কুমার ভৌমিক, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শ্রী তাপস ঘোষ, শ্রী ঘোষ গৌরব, তনুশ্রী ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।বিহার বাঙালি সমিতি বরারী শাখার প্রেসিডেন্ট  শ্রী তরুন ঘোষ মহাশয় সমাজ এর সমস্ত লোকের কাছে অনুরোধ করেন যে তারা কোবিডের এর সমস্ত বিধি অনুসরণ করেন।

প্রতিবেদন - সুবোধ ভৌমিক

কবি প্রণাম: অঙ্কন রায় ও কস্তুরী চট্টোপাধ্যায় ।


 

-নব বর্ষের এ কাল ও সেকাল - তৃষা পাল


ইংরেজি ক্যালেন্ডার সরিয়ে পঞ্জিকা এলো ঘরে
আকবর হিজরী সন সরিয়ে বঙ্গাব্দ গড়ে |
চন্দ্র গণনা বাদ দিয়ে সৌর আরবি মিশে
ফসল তোলা আয়কর মেলে অনায়াসে |
জাত ধর্ম ভুলে গিয়ে মিলিত হয় বাঙালি
মুর্শীদ কুলি খাঁ, মিষ্টান্ন মুখের প্রবর্তক জানি |
আজ বাঙালির ব্যবধান ,তবু কি থাকবে দূরত্ব?
বাঙালির মিলন মেলায় শিল্প মহলে গুরুত্ব
রবি নজরুল এক হয়ে ভাঙে কাঁটাতার
দুই বাংলার উজ্জাপন বর্ষবরণ আধার |
গান কবিতা প্রযুক্তিতে এক সেতু তৈরী
নববর্ষের নব পরিধান , লাল খাতার শৈলী
অর্থনীতি নির্ভর হয়ে বঙ্গাব্দ বরণ
দোকান পাটে ঋণ সোধে নতুন বর্ষ স্মরণ
অদেখা শত্রু আজ রাখে গৃহবন্দী করে
তবু নববর্ষ হরষে আসে বাংলার আবেগ ভরে |--------
লিখতে বসেছি নব বর্ষের একাল ও সেকাল। কি লিখবো ভাবতে গিয়ে মেগাসিরিয়াল এর মত চোখের সামনে ভেসে উঠছে আমার ছোটবেলার নব বর্ষের আনন্দ ফুর্তি উল্লাসে কাটানো দিনগুলো ।
পরিবর্তনের দুটো যুগেরই সাক্ষী আমি ।
ছোটবেলায় নববর্ষ অন্যরকম ছিল । মায়ের সাথে আমরা বোনরাও কাকভোরে উঠে গঙ্গা স্নানে যেতাম ।।দুয়ারে আলপনা আঁকা হতো ।সদর দরজা আম পাতা আর সোলার বল দিয়ে সাজানো হতো ।রেডিও থেকে ভেসে আসা রবীন্দ্র সংগীত , এসো হে বৈশাখ এসো এসো । আমরা মায়ের হাতের সেলাই করা ছিটের নতুন জামা পরে বড়দের প্রণাম , মা ঠাকুরমায়ের আশীষ ,বড়দের দেখাদেখি আমরা ও করতাম কোলাকুলি ।ঠাকুরমার হাতের নাড়ু নতুন গুড়ের পায়েস দুপুরে ভাত কিংবা পোলাও মাংস সাথে দই মিষ্টি সব যেন কেমন নতুন বছরের গন্ধ বয়ে আনতো। তারপর বিকেলে ছিল হালখাতা। মুদি দোকান থেকে সোনার দোকান সব দোকানে দাদাদের সাথে গিয়ে মিষ্টির প্যাকেট ,ক্যালেন্ডার আর কপালের জোর থাকলে কাঁচের বোতলে কোকোকোলা । বাড়ি ফিরে সেগুলো ভাইবোন মিলে ভাগ করে খাওয়া সে যে কি আনন্দ ভুলতে পারি না ।সন্ধের পর পাড়ায় কারও বাড়ির উঠানে বা ছাদে গান নাচ ও কবিতার আসর সেখানে বড়দের সাথে ছোটরা ও অংশ নিত ,কোন কোন বাড়িতে কীর্তন হতো সেসব বাড়িতে প্রসাদ খেতে যাওয়া সে ও ভারী আনন্দ ।
সে আনন্দ যেন একটা নতুন বছরের আনন্দ বয়ে আনতো।
দিন যায় দিন আসে । সে কালের মত এ কালের সূর্য ও একই ভাবে উদয় হয়
কালের স্রোতে এখোনো নতুন বছর আসে ।যুগের সাথে পরিবর্তন এই তো সংসারের নিয়ম । সেকালে র নব বর্ষ আর এ কালের নব বর্ষের তফাৎ বুঝতে পারি । আজকাল আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের পাঠানো শুভ নববর্ষের ছবি গান আর মেসেজে ফোনের ইনবক্স ভরে যায় ,ফেসবুকের
বন্ধুরা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায় ।
নব বর্ষের দিন বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম কোলাকুলি র হয়তো কিছুটা এখন ও প্রচলন আছে । মায়ের হাতে তৈরি ছিটের জামার পরিবর্তে ছেলে মেয়েরা শপিং মলে যায় নিজেদের জামা কাপড় পছন্দ করে কিনে আনে । রেস্টুরেন্টের মোমো পিৎজা বিরিয়ানী চাইনিজ বেশ আয়েশ করে খায় ।প্রিয়জনদের উপহার দিয়ে ও নব বর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ।
হালখাতা চল নেই কারন বাড়ির সবই প্রয়জনীয় জিনিস তো বিগ বাস্কেট বা শপিং মল থেকে আসে।
ঐ দিন পিকনিক বা আউটিং এর চল এখন বেশী।পাড়ার ক্লাবে বা বন্ধু বান্ধব রা মিলে গান বাজনা নিজেদের মত করে ।
বৈশাখী মেলার আনন্দ থেকে আমাদের ছেলে মেয়েরা বঞ্চিত ।দল বেঁধে আমরা বাড়ির ছোটরা যেতাম গ্রামের মাঠে বসা বৈশাখী মেলায়। একটি গোটা সিদ্ধ ডিম কিংবা পুরো একটি আলুর দম কাঠিতে ঢুকিয়ে খাওয়ায় যে আনন্দ, পুতুল নাচ ,নাগর দোলা আজ ও মনের কোঠায় জ্বল জ্বল করছে।
আজ আমার সন্তানরা নব বর্ষের দিন বড় বড় ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে বার্গার, সাসলিক কিংবা স্যান্ডউইচ খেয়েও কি সে আনন্দ পায়? আনন্দ পাওয়ার সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কিংবা মানসিক প্রস্তুতি কি তাদের আছে? নেই। চরকিতে চড়া, বায়োস্কোপ দেখার খুশি খুশি মুখ কি আজ সিনেপ্লেক্সে পাওয়া যায়? হয়তো অনেকে বলবে, আমরা আধুনিক হয়েছি, প্রযুক্তি এগিয়েছে—পুরনোকে আঁকড়ে ধরে কী লাভ? আমি বলব, সে-ই প্রকৃত আধুনিক, যে নিজের অস্তিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে নতুনকে আবাহন করে।
বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার পর নববর্ষের এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক। মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন, ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি ভাবীকালের মঙ্গল ও শুভর কামনায় এর প্রতিটি উপাদান থাকে সজীব। শোষণ, শাসন, তোষণ কিংবা পশ্চাত্পদ ভাবাদর্শ কোনো কিছুই বাঙালির নিজস্ব শক্তির অফুরন্ত আধার থেকে আমাদের বিচ্যুত করতে পারেনি, হয় তো পারবেও না কোনো দিন।আমাদের পরের প্রজন্ম কি করবে বলা কঠিন ।----------


1

বর্ণপরিচয়