Homage to Vidyasagar by Vidyasagar Smrityraksha Samity and Bharat Gyan Vigyan Samity







প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এর ১৩০তম প্রয়াণ দিবস : বিদ্যাসাগর স্মরণ সমিতি

আজ 29 শে জুলাই, প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এর 130 তম প্রয়াণ দিবস ।এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে , অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় গঠিত বিদ্যাসাগর স্মরণ সমিতির পক্ষ থেকে মেদিনীপুর শহরে, বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশে মাল্যদানের কর্মসূচি গৃহীত হয় ।গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানভিত্তিক সার্বজনীন শিক্ষার আধুনিকতম ধারণার তারই অবদান।  নারী-জীবনের অসহনীয় যন্ত্রণায় তিনি পাগল হয়ে উঠতেন ।গোটা সমাজের গোঁড়ামির বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি তাই নারী শিক্ষা ,বাল্যবিবাহ রোধ ,বিধবা বিবাহ প্রবর্তন এর জন্য এক অবিস্মরণীয় সংগ্রামী চালিয়েছেন। তৎকালীন সময়ে দেশের সমস্ত ক্ষেত্রে বড় মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। আজ সারা বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়ঙ্কর আক্রমনে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত সেই অবস্থায় ও আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে আমরা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সর্বত্র বিদ্যাসাগরের জীবনের নানান দিক আলোচিত বিষয় হিসাবে আমরা চালিয়ে যাচ্ছি ।আজকের এই মাল্যদান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর স্মরণে সমিতির অফিস সম্পাদক, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার প্রাণতোষ মাইতি ,ছিলেন  অধ্যাপক  দেবাশীষ আইচ, শিক্ষক উত্তম প্রধান ,শিক্ষক তপন দাস ,শিক্ষক শুভাশিস শাসমল ,শিক্ষক অক্ষয় খান সহ আরো অনেকে।

প্রতিবেদন - উত্তম প্রধান, প্রাণোতোষ মাইতি





ভারতবর্ষের নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম প্রয়াণ দিবস: "মিডনাপুর-ডট-ইন"

আজ বাংলা তথা ভারতবর্ষের নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা (১৩ শ্রাবণ) ও ইংরেজি (২৯ জুলাই) দুটো তারিখই আজ মিলে গেছে। আসুন আমরা সবাই তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করি। ঘরে ঘরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। আজ এই দৃঢ়চেতা মানুষটির প্রতি 'বাংলা', 'ENGLISH', 'हिन्दी' ও 'ᱥᱟᱱᱛᱟᱲᱤ' ভাষায় "মিডনাপুর-ডট-ইন" এর স্মরণ শ্রদ্ধাঞ্জলি - http://midnapore.in/vidyasagar/




বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয় ১৮৯১ সালের ২৯ শে জুলাই, রাত্রি ২টো ১৮ মিনিটে। রাত ১২টা পেরিয়ে যাওয়ায় তারিখটা আসলে ৩০ শে জুলাই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে "মিডনাপুর-ডট-ইন" এর উদ্যোগে ৩০ তারিখ ঠিক রাত্রি ২টো ১৮ মিনিটে ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের বুকে রোপন করা হল তাঁর নিজের হাতে লাগানো কাঠ-বাদাম গাছের থেকে তৈরী চারা। 

ফিরে এসো বিদ্যাসাগর, পুনর্জন্ম নাও এই পবিত্র ভূমিতে। 

বাংলা ভাষার জন্য ধ্রুপদী সন্মান আদায়: আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতি



            গত দুই মাস ধরে লাগাতর চেষ্টা চলছে তথ্যাদি জোগাড় করতে যাতে প্রমাণিত হয় ওড়িয়া ও আরও কিছু ভাষার মতো পৃথিবীর মিষ্টতম ভাষা বাংলাও প্রচীন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশীরভাগ ভাষা সংস্কৃতি প্রেমী (?) মানুষগুলো উদাসীন, যেন কিছুই বোঝে না, বোঝে এটা ওটা সেটা। তবে আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতি বুঝে গেছে বাংলা ভাষার জন্য ধ্রুপদী সন্মান আদায় করতেই হবে সব নিয়মকানুন মেনে।
               দেরীতে হলেও আপনিও যোগদিন আমাদের এই পবিত্র কাজে আজই, কিছু তথ্য থাকলে দিন বা সূত্র জানান।
                ধন্যবাদ সহ 
সজল কুমার গুহ।
(৯৬৭৯২১৩০১৫)

ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে বিদ্যাসাগরের তিরোধান দিবস পালন :-- মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার উদ্যোগে

ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে  বিদ্যাসাগরের তিরোধান দিবস পালন 

        অখণ্ড জেলার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার উদ্যোগে  আজ ১৩ শ্রাবন ও ২৯ জুলাই বাংলা ও ইংরেজী তারিখের মহা সন্ধিক্ষনে পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩০ তম তিরোধান দিবস পালন করা হলো ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে l
         সভার শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে ঈশিতা জানা ও  সঞ্চয়ন  জানা l স্বাগত ভাষণ দেন সল্টলেক আঞ্চলিক ইউনিট কমিটির সভাপতি পূর্ণেন্দু মাইতি মহাশয় l
         বক্তব্য রাখেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রণবেশ জানা l
        মেদিনীপুর আঞ্চলিক ইউনিটের সভাপতি মানিক চন্দ্র ঘাটা , কাঁথি আঞ্চলিক ইউনিটের সম্পাদক অধ্যাপক হৃষিকেশ  পড়িয়া , কলকাতা দক্ষিণ আঞ্চলিক ইউনিটের সম্পাদক সুব্রত মজি , সংস্থার  যুগ্ম সম্পাদক আমিত কুমার সাহু , কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমলেন্দু বিকাশ মহাপাত্র ,অধ্যাপক অম্লান কান্তি পান্ডা l
        এছাড়া সভাতে অংশগ্রগণ করেন কলকাতা উত্তর আঞ্চলিক ইউনিট সম্পাদক চঞ্চল সাউ ,  সমরেন্দ্র নাথ মাইতি , কুমকুম সামন্ত , কমল পাত্র প্রমুখ ll
        কচি -কাঁচাদের , গান ও আবৃতি ও অনুষ্ঠানটিকে মনোজ্ঞ করে তুলে l
        সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সল্টলেক আঞ্চলিক ইউনিটের সম্পাদক শ্যামাপদ জানা l
সভায় বিদ্যাসাগরের জন্ম থেকে শুরুকরে শিক্ষা , সমাজ সংস্কার ও জীবন দর্শন নিয়ে  ব্যক্তারা আলোকপাত করেন l
        উল্লেখ্যমেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা  প্রথম ও দ্বিতীয়  শ্রেণীতে বর্ণপরিচয় পুনরায় চালু করতে প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর করে ২০১১ সাল থেকে  l আনন্দের কথা বিদ্যাসাগরের ২০০ তম জন্মদিবসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর  পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন l 
        এছাড়া সংস্থার  উল্লেখযোগ্য কাজ হলো  স্বাধীনতার ৭১ বছর পরে কলকাতায় মেদিনীপুর ভবন গড়েতুলা  ও বিদ্যাসাগরের নামে নূন্যতম  খরচে সর্বসাধারণের জন্যে অতিথি নিবাস  চালু করা l
মেদিনীপুরের , বাংলার ও ভারতের স্মরণীয় - বরণীয়া মনীষীদের নিয়ে তিনটি মূল্যবান পুস্তক রচনা প্রমুখ l
            মহামানব বিদ্যাসাগরকে  প্রণাম জানিয়ে সভার কাজ শেষ করা হয়  l


পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ১৩০ তম প্রয়াণ দিবস: রামনারায়ণপুর সপ্তক শিল্পীচক্রের ব্যবস্থাপনায়

আজ ২৯শে জুলাই। পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ১৩০ তম প্রয়াণ দিবস। এই উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় রামনারায়ণপুর সপ্তক শিল্পীচক্রের ব্যবস্থাপনায় এক ঘরোয়া পরিবেশে বিদ্যাসাগর স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান শ্রীমতী রেবারানী মণ্ডল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন রিয়া মাইতি ও সপ্তর্ষি মণ্ডল। "কার্মাটারে বিদ্যাসাগর" এই প্রসঙ্গে আলোচনা করেন শ্রী তারক চন্দ্র মন্ডল। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রেয়সী মণ্ডল। এরপর শ্রী তারক মাজি রচিত " আলোর দিশারী বিদ্যাসাগর " সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়  সমবেত ভাবে। বিদ্যাসাগরের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন শ্রী শ্যামল মণ্ডল। সমগ্র অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন  শ্রীমতী রেবারানী মণ্ডল ও শ্রীমতী মিতা মণ্ডল।




বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ১৩০তম প্রয়াণ দিবস: ২৯শে জুলাই

বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ১৩০তম প্রয়াণ দিবস (২৯শে জুলাই) উপলক্ষে শ্রী তৃষা পাল (পাটনা) কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন জানিয়েছেন। সমিতির পক্ষ থেকে ওনাকে অভিনন্দন জানাই

দেশভাষা - বিদ্যুৎ পাল

দেশভাষা

বিদ্যুৎ পাল


মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ –
না পেলে কী করি?  
জমছে শিশুর হাড়ে, দিব্যি,
বেবি ফুডের খড়ি। 

ভাষা জীবন – কিন্তু জীবন 
ঠিক মত কি বাঁচি?
রুজির দৌড়ে ভোগের এঁটো
‘লাইফ’ বলে চাঁছি!  

বাঁচার সবটা বাঁচতে হলে
বাঁচিয়ে রাখো ভাষা, 
দুধের শক্তি হাড়ে জাগায়
প্রেম ও জিজ্ঞাসা। 


একটা ভাষা মায়ের মুখের
একটা কাজের, শিখি
সরকারিটা শিখতে মনের 
বিকাশে বাধছে কি?

থাকে যদি মাথার জোর
শিখবো ভাষা আরো,
(তবে) জোরটা যে দেয় মাতৃভাষাই
না করতে পারো? 

ভারত নামে ঘর বেঁধেছি
অনেক ভাষার ভিতে –
মনের মিলের বেশিটা পাই
না-বোঝার সঙ্গীতে।

বাংলা থেকে কাছে দূরে
বাংলা নিয়ে লড়ি,
ঐক্য, যেমন কথা ছিল
তেমনি সুরে গড়ি।

সারা ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু ও বাংলাভাষীদের অধিকার আদায়ের জন্য আত্ম-প্রস্তুতি ও দাবিপত্র

সারা ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু ও বাংলাভাষীদের
অধিকার আদায়ের জন্য আত্ম-প্রস্তুতি  দাবিপত্র    নীতীশ বিশ্বাস

        সারা ভারতের বাঙালি উদ্বাস্তুদের প্রধান সমস্যাগুলি এখন আমাদের সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা দরকার। যেমন ২০০৩ সালের পরে তার কেন্দ্রবিন্দুতে বিরাজ করছে নাগরিকত্বের প্রশ্নটি। তার আবার চরিত্রের দিক থেকে আসামে যেমন, সারা ভারতে তা নয়। কারণ ব্রিটিশ শাসকদের চক্রান্তে আর বাংলার বর্ণবাদীদের অগণতান্ত্রিক আচরণের ফলে বাংলার অন্যান্য প্রতিবেশি রাজ্যের মতোই আসামের সঙ্গেও আমাদের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। তার উপর অসমিয়া জাত্যভিমানী সংস্কৃতির হীনম্মন্য আক্রমণে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতি ঐ অঞ্চলে দীর্ঘ দিন আগে থেকেই আক্রান্ত ও রক্তাক্ত। তবে সেখানে নতুন শাসন প্রবর্তনের পর এই সমস্যা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। নাগরিক পঞ্জি নবিকরণের (NRC) নামে এক জ্বলন্ত অভিশাপ নেমে এসে যে ১৯ লক্ষ অনসমিয়াকে বেনাগরিক ঘোষণা করেছে, তার প্রায় ১২ লক্ষ হল দলিত বাঙালি উদ্বাস্তু। এই নাগরিকত্বের নথি প্রদানের একুশে-আইনের ধাক্কায় যে মানুষ গুলোর পরিবার ভেঙ্গে তছ-নছ হয়ে গেছে তাদের অধিকাংশই দলিত ও দরিদ্র মানুষ। অর্থাৎ আমরা স্বাধীনতার ৭ দশক পরেও নাগরিকত্বের নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। সংবিধানের কোন অধিকারের অধিকারী আমরা নই। তাই কেবল মাত্র পশ্চিমবঙ্গে আসা উদ্বাস্তুদেরই ২০টি প্রদেশে সতীর ছিন্ন দেহের মতো ছুঁড়ে-ফুঁড়ে ফেলা হল। তার না আছে সঠিক জমির বরাদ্দ, না গৃহের ব্যবস্থা, না স্বাস্থ্য, শিক্ষা। বিশেষ ভাবে তারা সারা দেশে আজ মাতৃভাষা ও মাতৃসংস্কৃতি হারা। এমন কি নেই তাদের জাতি প্রমাণ পত্র। তার ওপর, রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন ধরণের দলিত নেতা ও রাজনৈতিক দল এমন কি অরাজনৈতিক গ্রুপ বা NGO গুলিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঙালি দলিতদের জাতি প্রমাণ পত্র দেওয়ার বিরুদ্ধে। লজ্জার কথা তারাও আম্বেদকর বাদী কিন্তু বাঙালি বিদ্বেষী। কিন্তু সারা ভারতের সব আম্বেদকরবাদীই জানেন যে ১৯৪৬ সালে যুক্ত বাংলা থেকে বাবা সাহেবকে নির্বাচিত করেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের নেতৃত্বে বাংলার দলিত সদস্যরা (যাদের মধ্যে ছিলেন ২। ফরিদ পুরের কংগ্রেস সদস্য দ্বারিকানাথ বারুরি, ৩। কুমিল্লার গয়ানাথ বিশ্বাস, ৪। রংপুরের ক্ষেত্রনাথ সিঙ্ঘ, ৫। রংপুরের নির্দল সদস্য নগেন্দ্রনারায়ন রায়, ৬। মুর্শিদাবাদের আদিবাসী সদস্য বীর বীরশা, ৭। খুলনার মুকুন্দ বিহারী মল্লিক।) কিন্তু এই এদের বংশধরদেরই বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র স্বার্থে রাজ্যে রাজ্যে এই বিশ্বাসঘাতকতা। আর তাদের নেতা নেত্রীরাই পশ্চিমবঙ্গের নানা সভা-সমাবেশে বন্ধুবেশে হেসে হেসে গা-ঘেঁসে ঘেঁসে বাঙালি প্রেমের বাণী বিতরণ করেন। এই ট্রাজিডির মধ্যে আমরা আধ-মরা অবস্থায় বেঁচে আছি। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে গেলে আমাদের সারা দেশে প্রথমে মাতৃভাষার ন্যূনতম অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হবে। এটা ঠিক যে প্রশাসনে যে ভাষার অধিকার থাকে না সে ভাষা পড়ার আগ্রহ ছাত্র-ছাত্রীদের বা অভিভাবকদের থাকেনা। কিন্তু যারা সামান্য দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তারা বুঝবেন যে একটা নলকূপ স্থাপনের জন্যও প্রথমে একটা করে স্তর অতিক্রম করতে হয় তার পর সে নলকূপ থেকে আসে আরো নানা প্রয়োজনের অজস্র জলধারা। আগে সারা ভারতে আমাদের ছিল শহরে ও উদ্বাস্তু গ্রামে গ্রামে বাংলা স্কুল। এখন আমরা আর বাংলা মাধ্যমের স্কুল চাইনা। কারণ আন্দামান (৬৪% বাংলা ভাষী), ঝাড়খন্ড (৪২% বাংলা ভাষী) বা আসাম (৩৬% বাংলা ভাষী) ছাড়া সে বাস্তব পরিস্থিতি আর নেই। সে যাই হোক আন্দোলন করলে যে কিছু ফল আসে তার প্রমাণ কর্ণাটক, বিহার এবং মহারাষ্ট্রের কিছু পকেট। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে  আমাদের নিচের তথ্যগুলি সংগ্রহ করতে হবেঃ 

লোক সংখ্যা – 
 
১।। রাজ্যে কোন কোন অঞ্চলে বাঙালি/উদ্বাস্তু বাঙালিরা কত পরিমাণ বসবাস করেন? তার আবার জেলা বা অঞ্চল ধরে ধরে সংখ্যা। এই জন সংখ্যা কিন্তু লোক গণনার নথি থেকে ধরা যাবে না। নিতে হবে অঞ্চল ভিত্তিক ভোটার লিস্টের পদবি বা গ্রামের বাসিন্দাদের জানা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে। তাই একাজ যেকোন সাধারণ গবেষক/সমীক্ষক পারবেন না। চাই এলাকা-বিশেষজ্ঞ মানুষ। 

স্কুল সংখ্যা –

২।ক। ঐতিহ্যপূর্ণ পুরনো স্কুল কোথায় ছিলো? তার নাম সাল এককালের ঐতিহ্য। এবং এখন তার স্মৃতি কতটুকু আছে কি ভাবে? বাংলা বাস্তবতঃ পড়ানো হয় কিনা? 
২।খ। উদ্বাস্তু গ্রামে গ্রামে এক বা একাধিক স্কুল গড়ে উঠেছিল। কত দিন পর্যন্ত  বাংলা মাধ্যম ছিলো? শিক্ষক ছিলো কিনা? কিভাবে তার মৃত্যু হল ? – এখন সেখানে কি স্কুল আছে? বা শেষ কি অবস্থা ? 
অন্য স্কুল – 
৩। ক।। অন্য কোন কোন স্কুলে এক বিষয়ও বাংলা পড়ানো হোত? কত সাল থেকে কতো সাল অবধি? এখন বাঙালি ছেলে মেয়েরা বাংলা পড়তে পারে কি? চায়কি ? 
৩।খ।। বাংলা বইপত্র কিছু আছে কি ? 
৩।।গ।। পশ্চিমবংগ কোন কালে বই দিতো কি ? কত বই ? কবে বন্ধ হল?
 
আমাদের দাবিঃ 

        প্রত্যেক অঞ্চলেই নিজ নিজ পরিস্থিতি অনুসারে দাবিগুলিও একটু একটু ভিন্ন তর হবে। তার ভিত্তিতে আমাদের রাজ্যে রাজ্যে আলাদা দাবিপত্র প্রস্তুত করতে হবে। সেই দাবিপত্র নিজের রাজ্যের জন্য সেই রাজ্যের বন্ধুদের করতে হবে। এ সব দাবির প্রায় সিংহ ভাগ রাজ্যে কাছে করতে হবে। 
কেন্দ্রীয় দাবি। 
১।ক। দন্ডকারণ্য প্রকল্পের অধীন যত স্কুল ছিলো, তার অধিকাংশই বাংলা মাধ্যম  ছিলো। সেই ভৌগলিক অঞ্চল বৃত্তে একটি বাংলা শিক্ষা-উপনিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তার বাজেট NCERT/ SCERTর মাধ্যমে বরাদ্দ হতে পারে। 
খ। দন্ডকারণ্য বা যেসব ট্রান্সিট ক্যাম্পের থেকে নানা স্থানে উদ্বাস্তুদের নানা অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে, সেখানেও বাংলা পড়ানোর জন্য কেন্দ্র সরকারকে বাজেট বরাদ্দ রাজ্যকে বা NCERT/SCERT কে দিতে হবে। 
২।ক। ঐতিহ্যবান বাংলা স্কুল/সংস্কৃতি কেন্দ্র/ধর্মস্থান ও ক্রীড়া কেন্দ্র বা খেলার মাঠগুলি সংস্কার ও উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। 
খ। বিশিষ্ট বাঙালি প্রতিষ্ঠান ও মহাজনদের গৃহ বা আশ্রম/শশ্মান ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

সঞ্চিতা জুলাই ২০২০ সংখ্যা (Sanchita July 2020 Issue)

Sanchita July 2020 Issue Link.

Please click the link.

https://drive.google.com/file/d/1Tzm_2-I71KOBfBQgpmuv-Fg4zAh-G5CB/view?usp=sharing


কবি গীতকার এবং সুরকার রজনীকান্ত সেন

কবি গীতকার এবং সুরকার রজনীকান্ত সেনের আজ ১৫৬তম জন্মদিনে বিহার বাঙালি সমিতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধ ও প্রণাম জানাই।


কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

রবীন্দ্র পুরষ্কার, সাহিত্য আকাডেমি, জ্ঞানপীঠ এবং পদ্মভূষণ পুরষ্কারে পুরষ্কৃত কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মদিবস (২৩-০৭-২০২০) বিহার বাঙালি সমিতির পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।


বহির্বঙ্গ ও বাংলা সাহিত্য: গবেষণাধর্মী সংকলন গ্রন্থ প্রকাশনা

বহির্বঙ্গ ও বাংলা সাহিত্য

এই বিষয়ে ISBN নম্বর সহ একটি গবেষণাধর্মী সংকলন গ্রন্থ প্রকাশনা কার্যে ব্রতী হয়েছি।

      একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় বাংলা সাহিত্যের বিরাট অংশজুড়ে আছে বিহারপ্রেক্ষাপটহিসেবে এসেছে বিহার, ঝাড়খন্ড। বাংলা সাহিত্যের চর্চা হয় ত্রিপুরা ও অসমের বরাক উপত্যকা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায়। আন্দামান, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশেও। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বাঙালির বাংলা সাহিত্য চর্চা এবং বাংলা সাহিত্যে যেভাবে বহির্বঙ্গ প্রেক্ষাপট  হিসেবে এসেছে এবং  চিন্তা চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে আমাদের একটি গবেষণাধর্মীগ্রন্থ সংকলনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

     সম্পাদক

প্রফেসর বিকাশ পাল, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় ( বিভাগীয় প্রধান)

তিলক মন্ডল,  নীলকমল বাগুই

         তাই এই বিষয়ে আপনাদের কাছে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ আহ্বান করা হচ্ছে।

লেখা পাঠানোর জন্য নিম্নের নিয়মাবলী অনুসরণ করুন --

১. প্রবন্ধের শব্দ সংখ্যা ২৫০০ থেকে ৩০০০  শব্দের মধ্যে। প্রবন্ধটি মৌলিক হ‌ওয়া বাঞ্ছনীয়। লেখাটি যেন Plagiarism দোষে দুষ্ট না হয়।

২. উদ্ধৃতি ব্যবহার করার সময়  এমএলএ নিয়ম মেনে তথ্যসূত্র পরিবেশন করবেন।

৩. লেখা টাইপ করে পাঠাবেন অভ্র কীবোর্ড এ, Doc এবং pdf উভয় ফাইলে লেখা পাঠাবেন।

৪. প্রাবন্ধিকগণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল সহ তাদের পরিচয় উল্লেখ করবেন।

৫. কোন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ লিখছেন তা আমাদের আগে থেকে জানিয়ে  দেবেন। প্রবন্ধের বিষয় যাতে একই না হয় সেই কারণে নিজের বিষয় আগে থেকে জানাবেন।

৬. একই বিষয়ের উপর একাধিক লেখা না থাকাই শ্রেয়।

৭. প্রবন্ধ নির্বাচিত হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।

৮. ৩০ নভেম্বর ২০২০ মধ্যে লেখা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

৮. প্রবন্ধ পাঠাবেন

nilkamalbagui23@gmail.com, tilokmondal2014@gmail.com  

প্রয়োজনে কথা বলুন :- তিলক মন্ডল- 7003298145, নীলকমল বাগুই - 8910474691


কাদম্বিনী গাঙ্গুলী : ১৮ই জুলাই



কাদম্বিনী গাঙ্গুলী : ১৮ই জুলাই
ভারতে প্রথম বাঙালি মহিলা ডাক্তার
জন্মদিনে তাঁকে বিহার বাঙালি সমিতির পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

সংকলন - শ্রী গৌরব দাস, পূর্ণিয়া শাখা

ডা০ বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)



ডা০ বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) এর জন্মদিন ৩ শ্রাবণ ১৯ জুলাই 
বিহার বাঙালি সমিতির পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

সংকলন - শ্রী গৌরব দাস, পূর্ণিয়া শাখা

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়



নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়'এর জন্মদিন ৩ শ্রাবণ ১৯জুলাই 
বিহার বাঙালি সমিতির পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

সংকলন - শ্রী গৌরব দাস, পূর্ণিয়া শাখা

প্রৈতি

প্রৈতি

শিল্প - সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা

লক ডাউনের মধ্যেই প্রৈতি শিল্প- সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকার চতুর্থ বর্ষের চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশিত হল। ৪৪ পৃষ্ঠার পত্রিকার সম্পাদক ড. গৌতম মুখোপাধ্যায় ডোরান্ডা কলেজ রাঁচির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পত্রিকায় ৪১টি কবিতা, কমলেশ রায় বিশিষ্ঠ সাংবাদিকের দ্রৌপদী নামক অনুগল্প, আইভি চট্টোপাধ্যায় এর সিন্ধু ও দিলীপ কুমার মিস্ত্রীর সম্পর্ক গল্প দুইটি পত্রিকার মান উন্নিত করেছে। অর্চনা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তীর বাংলা ভাষার অবক্ষয় রোধে অভিভাবকদের ভূমিকা লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র ছাত্রীদের অনীহার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সম্পাদক গৌতম বাবুর ঝাড়খণ্ডের লোক সাহিত্যে মাছ, রাজকুমার সরকারের বোধোদয় অনুগল্প ও ডা. গণেশ প্রাসাদ বসু মল্লিকের বাংলা পল্লী সাহিত্যে কবি বন্দে মিঞা প্রবন্ধ উচ্চ মানের। বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের সম্পাদক মৃগেন বিশ্বাস এর বাংলার নব জাগরণের প্রতীক ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি ঝাড়খণ্ডের সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর টুকরো টুকরো ভাষা আন্দোলন প্রবন্ধ এখানকার ভাষা সংস্কৃতির বর্তমান ও অতীত কে তুলে ধরেছে। পুরুলিয়ার বিশিষ্ঠ লেখক অমিয় কুমার সেনগুপ্তের মানভূমের কাশীপুর পঞ্চকোট রাজ্য ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ টি সংগ্রহ করে রাখার মত। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পুরুলিয়ার রাজবাড়ীর কর্ম জীবন কে তুলে ধরেছেন। পত্রিকাটি সরাসরি সম্পাদকের ডোরান্ডা কলেজের ঠিকানা থেকে অথবা শাখা দপ্তর মোকো ধানবাদ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। সম্পাদকের সঙ্গে মুঠোফোনে ৯৭৭১৮১৩২৯৩ এ যোগাযোগ করতে পারেন। শাখা দপ্তরের রাজকুমার সরকারের সঙ্গে ৮৩৪০৫৪৫৪৬৪ এ পত্রিকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রতিবেদক – গৌতম চট্টোপাধ্যায়


বৃন্দাবন মণ্ডলের গল্প - বিদ্যাসাগরের অবদান

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র কালীচরণ। ক্লাসের লাস্ট বয়। বন্ধুরা বলে কেলে। নামের সঙ্গে চেহারার মিল আছে। কালো কুচকুচে লম্বা সিড়িঙ্গে। হতদরিদ্র গরিব ছেলেটি বন্ধুবান্ধব এমনকি মাস্টারমশাইদেরও করুনার পাত্র। পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা। তবে পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা সরস্বতী পূজা বা গাছ লাগানোয় উৎসাহ যথেষ্ট।     
আজ স্কুলে অনুষ্ঠান। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মদিন। কালীচরণ অতসব বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করে না। তার নিরেট মাথাটাই কিছুই ঢুকতে চায়না। স্কুলের বড় হলঘরটায় একটা ছবি ফুল দিয়ে সাজানো। এই লোকটাই নাকি বিদ্যাসাগর। মনে পড়ে গেলো।  ছবিটা ছিল সেই ছোটবেলার বর্ণপরিচয় বই এর সামনে।      
স্কুলের ছেলেমেয়েরা গান গাইল। মাস্টারমশাইরা এবং হেডমাস্টারমশাই বিদ্যাসাগর নিয়ে অনেক কথা বললেন। কালীচরণ শুনতে শুনতে কেমন আনমনা হয়ে গেল। গরিবের ছেলে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনের কথাগুলো ও আজ বেশ বুঝতে পারছিল। কোথাও কোনো জটিলতা নেই, সব জলের মত পরিষ্কার। শুনতে শুনতে ওর মনের ভেতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠল। ওই গরিব ছেলেটাই নাকি বড় হয়ে বহু গরিব দুঃখী মানুষদের সাহায্য করেছেন, তাদের সেবা করেছেন। অনুষ্ঠান শেষে হেডমাস্টারের নজরে পড়লো কালীচরণের এর উপর। জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে কালীচরণ কিছু বুঝযে পারলি?  কালীচরণ সচরাচর মুখ তুলে কথা বলে না। আজও দাঁড়িয়ে রইল মুখ গোঁজ করে।  হেড মাস্টার মশাই বললেন যা। তোকে  জিজ্ঞাসা করাই বৃথা!  পরদিন সারা স্কুলে একটা খবর রটে গেল। কালীচরণ নাকি সবুজসাথীর সাইকেলটা সামাই সোরেনকে দিয়ে দিয়েছে। সামাই আর বাবুলাল দুই ভাই। একসাথে স্কুলে আসে। বাবুলালের একটা পায়ে জোর কম। হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। গতকাল অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় কালীচরণ সময়কে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার সাইকেলটা নিবি? তোর ভাইয়ের সুবিধা হবে।
সামাই বলেছিল, খুব ভালো হয়। সাইকেলটা দিতে পেরে কালীচারণের খুব আনন্দ হয়েছিল।    পরদিন স্কুলে কালীচরণকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল। কালীচরণ লজ্জায় সংকুচিত। বিদ্যাসাগর সারাজীবনে এত কাজ করেছেন। আর সে তো মোটে একটা।   হেড মাস্টার মশাই কালীচরণ কে ডেকে পিঠে হাত দিয়ে বললেন, আমি বুঝতেই পারিনি কাল আমাদের বড় বড় কথা গুলো তুই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিস।

বৃন্দাবন মন্ডলের গল্প - বিদ্যাসাগর এবং বিদ্যাসাগর

তিনি আছেন। তিনি আছেন বহুদিন ধরে শহরের প্রাণকেন্দ্র আলো করে। শীত গ্রীষ্ম ঝড় জল অভাব-অনটন তাকে টলাতে পারেনি। হয়তো একটু ক্ষয়ে গেছে মূর্তিটা, হয়তো ঠিক চেনা  যায় না। তবু শহরের মানুষ জানে তিনি আছেন। স্কুলে কলেজে কোর্টকাছারিতে যাবার সময় ব্যস্ততার মধ্যেও মানুষ একবার চেয়ে দেখে, হ্যাঁ, তিনি আছেন। বিশেষ বিশেষ দিনে মানুষ এসে জড়ো হয়। নিজেকে যাচাই করে, পরিশুদ্ধ করে নেয় তার সামনে দাঁড়িয়ে। আসলে মূর্তিটা আর মূর্তি নেই,  মূর্তি  ছাড়িয়ে মানুষটা মিশে গেছেন শহরের আকাশে বাতাসে মাটিতে। ছোট ছোট অসংখ্য প্রতিরূপ যেন খোদাই হয়ে আছে মানুষের অন্তরে অন্তরে। তিনি বিদ্যাসাগর! সেই উনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে যার বর্ণপরিচয় হাতে নিয়ে বাঙালির বর্ণ পরিচয়। বাঙালীর বাঙ্গালীয়ানা, নবজাগরণের আলোকে পরিস্নান, উদারবাদের দীক্ষা,  গ্রহণশীলতা ও আন্তর্জাতিকতায় স্থিতি। সে বাঙালি আসলে বিশেষ কোনো মানুষের গোষ্ঠী মাত্র নয়; বাঙালিত্ব একটি ধারণা। এই সমস্ত  কিছুর প্রতীক হয়ে তিনি বিরাজ করছেন শহরের মাঝে।  কর্মযোগী  মানুষটি আজও অক্লান্ত। রোজ বিকেলে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লে খর্বাকৃতি মানুষটির ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সেখানে এসে আশ্রয় নেয় পাশের বস্তির কয়েকটি ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। সমাজের দূরতম প্রান্তে আজও  শিক্ষার আলো পৌঁছে নি! বিদ্যাসাগর পাঠদান করে চলেন, অ আ ক খ। ঐক্য বাক্য মানিক্য। শিক্ষার আলোয় চকচক করে ওঠে শতাব্দী প্রাচীন ম্লান মুখগুলি।
      দিনমনি সূর্যের আবর্তনের ছন্দে দিন যায় বছর ঘোরে। একদিন বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে সবচেয়ে বড় জাতীয় উৎসব উপস্থিত হয়। লোকসভা নির্বাচন। দিন বদলেছে, সেদিনের সেইসব নিয়ম কানুন রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবর্তন  জীবনের ধর্ম। এমনি একদিন ভোটের প্রচারে দুটি দল নেমে পড়ে শহরের অলিতে গলিতে। এখন গণতন্ত্রের প্রতীক হলো চেয়ার। অতএব যেন তেন প্রকারেন চেয়ার চায়। একদল বলল, এ শহর আমাদের। অন্য দল বলল, এ দেশ জনগণের। বচসা থেকে কথা কাটাকাটি, চুলোচুলি হাতাহাতি এবং শেষে লাঠি তলোয়ার বন্দুক। যারা এসব করছিল তারা কেমন যেন অচেনা ! হয়তো এই শহরেরই মানুষ, হয়তো বাংলা ভাষাতেই কথা বলে। অথচ হাবভাব আচার আচরণে সে বাংলা কোথায়? মানুষ দ্বিধান্বিত। মূর্তিকে জিজ্ঞাসা করলো, বিদ্যাসাগর, এরা কারা? শুনে ওদের ছোখ মুখ বদলে গেল। আরে, এই বুড়ো কি তাহলে নির্দল থেকে দাঁড়িয়েছে? এ তো ভোট কাটবে! এই জন্যই মূর্তিটা নিয়ে শহরের মাতামাতি। অতএব ওটাকে ভেঙে ফেল। মুখ বাধা উদ্যত লাঠি তলোয়ার  রে রে করে লাফিয়ে পড়ল মূর্তিটার উপর। দমাদম কয়েকটি আঘাত দিতেই  পুরনো মূর্তিটা গড়িয়ে পড়ল মাটিতে। তারপর শহর জুড়ে তাণ্ডবলীলা। কিন্তু দায় স্বীকার করল না কেউ। চলল পরস্পরকে দোষারোপ আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের প্রতিযোগিতা। মানুষগুলোর ভোট চাই তো।  মিটিং হল সভা হল; পদযাত্রা হল। একদল বলল, আমরা অষ্টধাতু দিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানিয়ে দেব, বৈদিক মন্ত্রে  প্রাণ প্রতিষ্ঠা করব। আরেক দল বললো,  আমরা কষ্টি পাথরের মূর্তি বানাবো যে মূর্তি কেবল দেবতারই হয়। আশ্চর্য! এত সব ঘটল অথচ শিক্ষিত সভ্য সমাজ সর্বশক্তিতে প্রতিরোধ গড়ে তুললো না যেমনটা আগে হয়েছে বহুবার। আসলে সময় কোথায়? ছেলের জয়েন্ট, মেয়ের নাচ; এক সপ্তাহ বাদেই সিমলার টিকিট কাটা আছে। অবশ্য দু চারজন যারা কালো পতাকা হাতে পথে নেমেছিল শুরুতেই তাদের গলা চেপে ধরা হলো। ভোট উৎসব শেষ। নানান কৌশল অবলম্বনে এক দল জিতল, সংখ্যাতত্বের হিসেবে মেজরিটি। আর কে না জানে, জো জিতা ওহি সিকান্দার। অতএব তারাই মূর্তি নির্মাণের বাহুবলি। মহাসমারোহে মূর্তি নির্মাণ শুরু হল। সাড়ে চার ফুট মূর্তির জন্য সাড়ে চার হাজার গাড়ি ঘোড়া ছুটল; ছোট বড় অফিসার আমলা মন্ত্রী উঠে পড়ে লেগে পড়লো মূর্তি উৎসব পালন করতে।     
এখন কাঁচের ঘরে নিয়নের আলোয় সব সময় ঝকমক করতে থাকে মূর্তিটা। চারপাশ ঘিরে সুদৃশ্য উদ্যান। খবর ছোটে দিকে দিকে, ধন্য ধন্য পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞ দল নিযুক্ত হয়, নুতন করে লেখা হয় বিদ্যাসাগরের জীবনী ও অবদান। দেশ বিদেশে থেকে প্রতিনিধি আসে এই মহান ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে। সরকারের মুকুটে শোভা পায় আন্তর্জাতিক সোনালী পালক।   বিদ্যাসাগর পরব  শেষ হলে জায়গাটা শান্ত হয়। একদিন ধীর পায়ে হেঁটে আসে  বস্তির সেই ছেলে মেয়ে গুলি। ছায়াটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিজলি আলোয় ছায়া পড়ে না। ছেলেগুলি সে সব অগ্রাহ্য করে মূর্তির সামনে এসে দাঁড়ায়।
----- বিদ্যাসাগর, আমাদের লেখাপড়া শেখাবে না?  মূর্তিটা চোখ খোলে। তারপর বলে ওঠে, তোমরা কে? তোমাদের তো চিনি না।


কাটিহার থেকে মীরার গল্প - ডোরেমন


(১)
আজ আমার রিক দাদাভাইয়ের বিয়ে। সারাবাড়িটা যেন আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে। সবাই আজ কত খুশি! নতুন বৌমণি ঘরে আসবে বলে কথা। আমার দাদাভাইটাকেও বরের বেশে দিব্যি কোনও রাজকুমারের মতন দেখতে লাগছে। অবশ্য আমি এই বিয়ের অংশ নই বললেই চলে। সবার মাঝে আমি যেন বড্ড বেমানান আমার এই অন্ধকার মুখ নিয়ে। ওই যে দাদাভাইয়ের খাটের পাশটা, ওইটাই আমার সব থেকে প্রিয় জায়গা। কিন্তু আমি জানি, আর কদিন পর ওখানেও আমার আর কোনও অধিকার থাকবে না। যার ঘরটাই কোনদিন নিজের ছিল না, তার আবার অধিকার কিসের!

(২)
আমি যখন প্রথম এবাড়িতে আসি, তখন দাদাভাইয়ের পনেরো-ষোলো বছর বয়স। আর আমি! তখন আমি দুমাসের ফুটফুটে শিশু। আমার দুধসাদা রং আর লেজে ও উপর কালোর ঈষত রেখা দেখে দাদাভাই বলেছিল, "হাউ কিউট, আমি এই কিটেনটাকে আমার কাছেই রাখব। ও আমার বন্ধু হবে। " মামণি অবশ্য প্রথম কমাস আমায় বিশেষ সুনজরে দেখেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনিও আমায় ভালবাসতে শুরু করেন। বাড়ির সবার আদরের ছিলাম আমি, বাড়ির আরেক ছেলে। দাদাভাই আদর করে আমার নাম রেখেছিল 'ডোরাম'। ভাবছেন এই অদ্ভুত নাম রাখার কারণ কি? আরে ওই যে, টিভিতে 'ডোরেমন' নামক যে বিড়ালটিকে আপনারা সর্বদাই দেখতে পান, সে ছিল আমার দাদাভাইয়ের অত্যন্ত প্রিয়। তার নামের সাথেই মিলিয়ে রাখা হয়েছিল আমার নামটা। সবসময় দাদাভাইয়ের পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল আমার কাজ। আর দাদাভাইও সময়ে অসময়ে আমায় কোলে তুলে আদর করতে কার্পণ্য বোধ করত না। সময়ের সাথে সাথে আমরা দুজনেই বড়ো হয়ে উঠি। এখন দাদাভাইয়ের নিজস্ব একটা জগত তৈরী হয়েছে। ওর বন্ধুবান্ধব, হইহুল্লোড়ের মাঝখানে আমার জায়গাটা ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। এখন দাদাভাই আর আগের মতন আমার সাথে খেলা করেনা। প্রাণ খুলে হাসি গল্প করেনা। হয়তো মাঝেসাঝে এক আধবার কোলে তুলে শুকনো আদর করে। ব্যস, ওইটুকুই। আমিও আজকাল ওর ঘরে মনমরা হয়ে বসে থাকি। ওর জীবন থেকে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। এরপর, ওর জীবনে এল বৈশালী দি, ওর প্রেমিকা। ব্যস, এতদিন যেটুকু ভালোবাসা মনোযোগও আমায় দিত দাদাভাই, সেটুকুও এবার বৈশালীদির ভাগে চলে গেল। এরপর, ওর জীবনে আমার গুরুত্বও সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে গেল।

(৩)
শুনেছিলাম, আমার  নতুন বৌমণি, বৈশালী দি নাকি পশুপাখি বিশেষ পছন্দ করেনা। অতএব, প্রেমিকার  মন রাখতে দাদাভাই পত্রপাঠ আমাকে ঘর থেকে বিদায় করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, এতদিনের পুরোনো আবাস, তার স্মৃতি ছেড়ে কি এত সহজে যাওয়া যায়? আমিও যেতে চাইনি কিন্তু ওরা আমায় বাধ্য করেছে। আমায় ব্যাগে ভরে দূরের ওই জঙ্গলটায় ছেড়ে আসার কথা আলোচনা করেছিল 'পরিবার'। কিন্তু, ওরা ছেড়ে আসার আগে আমিই এই বাড়ি থেকে চিরতরে চলে যাব। বৃদ্ধ হয়েছি আমি এখন। আর কটা দিনই বা বাঁচব! তবে, শেষ বয়সে স্বজন হারানোর যন্ত্রণাও যে আমায় ভোগ করতে হবে, তা আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি। আমার বড় হয়ে ওঠার পিছনে, আমায় একটা সুস্থ জীবন দেবার পিছনে ওদের অবদান আমি কখনওই অস্বীকার করতে পারব না। কিন্তু তাও এসব দেখে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে মানুষ কি সত্যিই এতটা স্বার্থপর হতে পারে? জানেন, ছোটবেলায় দাদাভাই সবসময় আমায় বলত, "ডোরাম, ওই যে টিভিতে নোবিতা আর ডোরেমনকে দেখছিস, ওদের থেকেও গভীর আমাদের বন্ধুত্ব। তুই-ই আমার ডোরেমন। আমার জীবনে আর যেই আসুক না কেন, তোর আর আমার বন্ধুত্বের মাঝে কোনওদিনও ছেদ পড়বে না দেখিস।" সত্যিই কি তুমি তোমার কথা রাখতে পেরেছ দাদাভাই? তোমার ভালোবাসাও কি আর সবাইয়ের মতনই সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছিল? জীবনে নতুনের আগমনের সাথে সাথে তুমি পুরোনো বন্ধুত্বকে গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিতে পারলে? নোবিতার জীবনেও তো প্রেমিকা এসেছিল, কিন্তু তাই বলে সে তার পুরোনো বন্ধুকে তো ভুলে যায়নি। যদি আমায় ভালোই না বেসেছিলে, তবে কেনই বা আমাকে তোমার চিরসাথী বানানোর মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেছিলে? উত্তর আছে কি?

ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতি: দেওঘর শাখার সামাজিক কর্মসূচি

ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতি
দেওঘর শাখার সামাজিক কর্মসূচি


Add caption





শ্রী বিকাশ মিত্র এই ছবিগুলি পাঠিয়েছেন।






বিহার বাঙালি সমিতি: ৪৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা

৪৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা

বিহার বাঙালি সমিতির স্টল: 507

প্রতিবেদন / তন্ময় বীর

     এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় বিহার বাঙালি সমিতির অংশগ্রহণ নানান দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বহু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে উপস্থিত হওয়ার সুগভীর তাৎপর্য আছে


     
...শুধু বাংলা ভাষা নয় অন্যান্য অনেক ভাষাই আন্তর্জাতিক ও জাতীয় চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় তাদের গুরুত্ব ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে ব্যবহারিক জীবনে, অর্থনৈতিক দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পড়তে সর্বনাশের কিনারে উপনীত বাইরের আঘাত যখন তীব্রতর হয় তখন ঘরের ঐক্য দৃঢ় না হলে সমূহ সর্বনাশ ভারতের ভাষাগুলির ক্ষেত্রে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হলেও, বিষয়টি সত্য হয়ে উঠছে নানান রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির অংকে সংকীর্ণ ভাষাজাতীয়তাবাদের সুচতুর উপস্থাপনে প্রতিবেশী ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অনৈক্যর বীজ ব্যপ্ত হচ্ছে ...... বিহার বাঙালি সমিতির সভাপতি ডাক্তার দিলীপকুমার সিনহার সঙ্গে ভাগলপুরের একটি হোটেলের ঘরে এরকম ঘরোয়া আলোচনা চলছিল -



উপস্থিত ছিলেন শ্রীনীতীশ বিশ্বাস, শ্রীতপন সেনগুপ্ত (দিল্লি), শ্রীপ্রদীপ গাঙ্গুলি(দিল্লি), শ্রীবিদ্যুৎ পাল ও শ্রীসুনির্মল দাস এরকম ঘোরতর সংকটের আলোচনা আরো নানান ক্ষেত্রে, নানান সময় হয়েছে ‘কিছু করতে হবে’ - এরকম বুদবুদও মনে জেগেছে; কিন্তু সভাসমিতি থেকে ফিরে রুটি-রোজগারের তাড়নায় এবং ‘আর কী হবে!’ এরকম একটা মধ্যবিত্ত আলস্যের বিজৃম্ভণে সব ভুলে যাই সেদিন আমরা ভেবেছিলাম অনেক আরও অনেক করণীয় কাজের সঙ্গে আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় (২৯ জানুয়ারি – ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) বিহার বাঙালি সমিতি অংশগ্রহণ করুক এবং তা নিম্নোক্ত কারণে –

১। বিহার বাঙালি সমিতির কার্যকলাপ, ইতিহাস-ঐতিহ্য ক্রমশ বাইরের জগতের কাছে বিস্মৃত হচ্ছে, তাকে আবার পরিচিতির আলোকে আনা।

 



২। বিহার বাঙালি সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিহারের নতুন প্রজন্ম এই সমিতিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থিত দেখলে আরো উৎসাহিত হবে

৩। বিহারের বাঙালিই শুধু নয় পুস্তকমেলায় আগত বিহারের সব ভাষাভাষী মানুষের  সাংস্কৃতিক ঠিকানা হতে পারবে এই স্টল

৪। সমিতির কার্যকলাপের বিবরণ, সমিতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমিতি প্রাকাশিত পত্র-পত্রিকা, স্মরণিকা ও গ্রন্থাদি বৃহত্তর পরিসরে উপস্থাপন করা যাবে

৬। পুস্তকমেলায় বিহার বাঙালি সমিতির সদস্য/সদস্যাদের বা সমিতির পরিচিতদের বই পত্র-পত্রিকা সমিতির স্টলে রাখা যেতে পারে।

 

৭। সম্ভব হলে বিহার বাংলা একাডেমী প্রকাশিত বইপত্র সম্ভব এই স্টলে রাখা হবে বিহার বাংলা একাডেমির নতুন সম্ভাবনার দিকগুলি এসবের মধ্য দিয়ে জাগ্রত হতে পারে

৮। প্রয়োজনে মেলার কোনো মঞ্চ ভাড়া নিয়ে বড়ো করে বহির্বঙ্গের বাঙ্গালী, তাদের সমস্যা, প্রকৃত অবস্থান, করণীয় ও বাংলা সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সেমিনার ও আলোচনা সভা করা হবে

৯। বেশ কিছুদিন আগে কলকাতা পুস্তকমেলায় লিটল ম্যাগাজিন বাংলা পত্র-পত্রিকার একটি নির্দিষ্ট কর্নার থাকতো, নানান কারণে তা উঠে গেছে, এমনকি বহির্বঙ্গের থেকে আসা পত্রপত্রিকার সংখ্যাও কমেছে। এই স্টল সেই অভাব পূরণ করতে পারে যে সব

পত্রপত্রিকা, সংস্থা দূরত্ব সময় বা ব্যবস্থাপনার কারণে মেলায় অংশ নিতে পারে না তাঁরা সমিতির এই স্টল ব্যবহার করতে পারে। 

১০। সামগ্রিকভাবে বিহারে বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় সর্বভারতীয় স্তরে প্রসারিত করা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হিসেবে সমগ্র বহির্বঙ্গকে সঙ্গে নিয়ে শক্তিশালী ভাষাচেতনার অংশীদার হওয়া এর উদ্দেশ্য



 

        সত্যি অবাক হয়েছিলাম যখন এর কিছুদিন পরেই সমিতি থেকে জানানো হয় যে সমিতি কলকাতা পুস্তকমেলায় স্টল নেবে এবং আমাকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। যে মুহূর্তে বইমেলা কর্তৃপক্ষ জানায় যে স্টল পাওয়া যাবে, সেই মুহূর্ত থেকেই সমস্ত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে বইমেলায় সমিতির উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পূর্ব-উদ্দেশ্যগুলি যাতে সিদ্ধ হয় তার জন্য সর্বপ্রকার উদ্যোগ নেওয়া হয় খুব সামান্য সময়ের মধ্যে অনেকগুলি কাজ করে ফেলতে হয় কিছু কিছু বই পত্রিকা আসে ডাকযোগে, কিছু হাতে হাতে। নাগাল্যান্ড আসাম ত্রিপুরা থেকে বই পত্রিকা এসে যায়, এসে যায় ঝাড়খণ্ড থেকে। সাড়া পাওয়া যেতে থাকে খুব আশাব্যঞ্জক রকমের সমিতির মুখপত্র সঞ্চিতা, হিন্দি প্রচারপত্র, বেহার হেরাল্ড ও অন্যান্য প্রকাশনা পৌঁছে যায় বইমেলা শুরু হওয়ার আগেই। এবারের স্টল ক্রমাঙ্ক ছিল ৫০৭ এবং এর অবস্থান ছিল খুব ভালো জায়গায় খুব কাছে ছিল লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বইয়ের স্টল, দুটো প্রবেশ দ্বার দিয়ে সমানভাবে আসবার সুযোগ ছিল। আমরা চেষ্টা করি ভারতের বিভিন্ন জায়গার বাংলা পত্রপত্রিকা এবং কোন প্রচেষ্টা নেই বিভিন্ন রাজ্যের বাঙালি, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সম্বলিত বইপত্র পত্রিকা চেয়েছেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী গবেষকরা বিহার থেকে সমিতির শ্রীশিবনাথ চ্যাটার্জী, সস্ত্রীক শ্রীঅজয় স্যান্যাল, শ্রীঅঞ্জন ভট্টাচার্য, শ্রীআশিস ঘোষ প্রমুখ সদস্যরা নানান সময়ে স্টলে উপস্থিত থেকে স্টলের নানান দায়িত্ব না সামলালে আমার পক্ষে এই কাজ করা সত্যি দুঃসাধ্য হত, বিশেষ করে প্রথম কয়েকদিন বাংলাদেশে থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিলাম। আমার দুজন ছাত্র শ্রীমান সুরেশ ও শ্রীমান শুভম দুটি পর্যায়ে স্টলের সব দায়িত্ব সামলেছে বলে আরো কাজের সুবিধা হয়েছে কবি শ্রীশান্তনু গঙ্গারিডির সর্বক্ষণিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। বিষেশভাবে স্টলে নানান সময়ে বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থেকে, এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন এবং জ্বলন্ত সমাজ রাজনৈতিক সমস্যা, বহির্বঙ্গের বাংলা, বাঙালি ইত্যাদি নিয়ে স্টলের মধ্যে, স্টলের সামনে আলোচনা তর্ক-বিতর্ক জমিয়ে তুলেছিলেন। একদিন বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিলশ্রীশান্তনু গঙ্গারিডির ‘এখানেই আমাদের ঘর গেরস্থালি’ কাব্যগ্রন্থের উদ্বোধন, কবিতাপাঠ এবং ‘এই সময়ে বাঙালি ও বাংলা ভাষার সমস্যা’ বিষয়ে আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন বিহার বাঙালি সমিতির সভাপতি ক্যাপ্টেন দিলীপকুমার সিনহা, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, সমিতির সদস্য সদস্যা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আমরা দেখেছি বাংলার বাইরের পত্রপত্রিকা বই অনুবাদ-সাহিত্য পাঠকরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে কিনেছেন প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আরো সুষ্ঠু ও পরিকল্পনামাফিক হোক তার জন্য শুভেচ্ছা দিয়েছেন বিহার বাঙালি সমিতি নিজস্ব বইপত্র অত্যন্ত কম থাকায় অন্যান্য প্রকাশক লেখকদের কাছ থেকে আসা বইপত্রের বিক্রি বেশি হয়েছে, কয়েকজন সমিতির সদস্য হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

         

         যে উদ্দীপনা এই স্টলকে কেন্দ্র করে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের  বাইরের অন্যান্য রাজ্যের বাঙালিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া গেলে উপরিউক্ত উদ্দেশ্যগুলি অদূর ভবিষ্যতে সফল হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিহার বাংলা একাডেমিকে পুনরায় সক্রিয় করার কাজে সমিতির ভাবনাচিন্তা আরো দ্রুত ও কার্যকরী হওয়া বাঞ্ছনীয়। সমিতির হাতে যেসব মূল্যবান দলিল ও বইপত্র আছে, যেগুলি আর সহজে পাওয়া যায় না, সেগুলি পুন:প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ভবিষ্যতে বহির্বঙ্গের অন্যান্য প্রকাশক, লেখক ও সংস্থার সঙ্গে আরো নিবিড় যোগাযোগ করে বইমেলায় অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। সমিতির নিজস্ব যেসব এজেন্ডা আছে তার সঙ্গে এগুলো যুক্ত হলে ভালো হয় বলে আমার ধারণা। বাইরে ও ভেতরের সব কার্যক্রম মিলিয়ে সমিতির সেই অতীত উজ্জ্বল মহিমান্বিত দিনগুলি এইরকম নানান উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আবার ফিরে আসুক এই কামনা করি। আগামী দিনে বইমেলায় বিহার বাঙালি সমিতি আরও বৃহৎ, পরিকল্পিত এবং সফলভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে এই আশা রাখি।  

 *************

 


বর্ণপরিচয়