সফর
ওড়িশা রাজ্য ঘেঁসা
সারাইকেলা জেলার ভান্ডারী সাই গ্রামে দুদিন রাত্রিবাসের অভিজ্ঞতা। জ্ঞান বিজ্ঞান সমিতির
দুই দিনের সন্মেলনে অংশ গ্রহণ করার জন্য এখানে আসা।
এই গ্রামে কুর্মি
মাহাত, নাপিত, আচার্য, হো, কড়া, তাঁতী, লোহার, ইত্যাদি জাতি - সম্প্রদায়ের লোকেদের
বসবাস। এনাদের সকলের বোল চালের ভাষা ওড়িয়া
ও বাংলা। মাহাত ও আদিবাসীদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান বাংলা ভাষাতে হয় বাকিদের মধ্যে
ওড়িয়া’তে। ঝাড়খণ্ড আলাদা রাজ্য হওয়ার আগে এই সব অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের স্কুলে মুখ্যতঃ ওড়িয়া
ও কিছু কিছু জায়গায় বাংলা ভাষার মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু
দুঃখের বিষয় আজ এখানকার সব স্কুল হিন্দিভাষী
স্কুলে রূপান্তরিত। এর জন্য দায়ী স্থানীয় লোকেদের উদাসীনতা ও তার সাথে সাথে শিক্ষার দায়ভার প্রশাসকদের হাতে (যারা প্রায় সকলেই
অ - ঝাড়খখন্ডী ও হিন্দি প্রান্তের বাসিন্দা) তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা।
ওড়িয়া ভাষার নিধন
নিশ্চিত জেনে ওড়িশা সরকার সংজ্ঞান নিয়ে এখানকার স্কুলগুলিতে মাসিক 6000 টাকা বেতনে
একটি করে ওড়িয়া ভাষার শিক্ষক নিযুক্তি করেছে (গ্রামের বাসিন্দা পূর্ব সরপঞ্চ রাজা
রাম মাহাতোর রিপোর্ট অনুসারে)। কিন্তু এমন কোনো উদ্যোগ বাংলা ভাষা বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গ
সরকার আজ অব্দি নেয়নি। যার ফলে আজ পশ্চিম বাংলা লাগোয়া ঝাড়খণ্ড ও বিহার রাজ্যের
জেলাগুলো সহ স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকেও বাংলা বিতাড়িত হওয়ার মুখে।
আরোও জানাই যে এই
সব অঞ্চলের মানুষ ধর্ম প্রিয়। ওড়িয়া ভাষাভাষী লোকেদের বাড়িতেও কিন্তু বাংলা ভাষায়
লেখা ধর্ম গ্রন্থ (যেমন রামায়ন, মহাভারত,
বেদ, পুরান, ইত্যাদি) এখনও প্রিয়। তাদের সেই ধর্ম প্রিয়তাকে স্থানীয় বিত্তবান বা
ধনিকসম্প্রদায় ও তাদের বিত্ত - পোশিত রাজনীতিবিদেরা মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী লোকেদের
বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে তাদের কাছে নিয়ে গদি দখল করতে মেতে আছে। জনগণও দিশা হারা হয়ে,
না বুঝেই তাদের চক্রান্তে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
এই অঞ্চলের লোকেদের মাতৃভাষা (বাংলা ও উড়িয়া)
কে বাঁচাবার জন্য আজ এখানে না কোনো পার্টি আছে আর না কোনো সামাজিক সংগঠন।
এখানকার সকল স্কুল
কলেজে আগেকার মত আবার করে মাতৃভাষার মাধ্যমে
পড়াশুনা করার ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য
স্থানীয় জনগণদেরকে বোঝানোর ও ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান সমিতি
সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়েছে। এই ঐতিহাসিক কাজে
সকল শুভাকাঙ্ক্ষী লোকজনের কাছ থেকে যথাসম্ভব সহযোগিতা কামনা করি।
No comments:
Post a Comment