বৃন্দাবন মণ্ডলের গল্প - বিদ্যাসাগরের অবদান

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র কালীচরণ। ক্লাসের লাস্ট বয়। বন্ধুরা বলে কেলে। নামের সঙ্গে চেহারার মিল আছে। কালো কুচকুচে লম্বা সিড়িঙ্গে। হতদরিদ্র গরিব ছেলেটি বন্ধুবান্ধব এমনকি মাস্টারমশাইদেরও করুনার পাত্র। পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা। তবে পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা সরস্বতী পূজা বা গাছ লাগানোয় উৎসাহ যথেষ্ট।     
আজ স্কুলে অনুষ্ঠান। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মদিন। কালীচরণ অতসব বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করে না। তার নিরেট মাথাটাই কিছুই ঢুকতে চায়না। স্কুলের বড় হলঘরটায় একটা ছবি ফুল দিয়ে সাজানো। এই লোকটাই নাকি বিদ্যাসাগর। মনে পড়ে গেলো।  ছবিটা ছিল সেই ছোটবেলার বর্ণপরিচয় বই এর সামনে।      
স্কুলের ছেলেমেয়েরা গান গাইল। মাস্টারমশাইরা এবং হেডমাস্টারমশাই বিদ্যাসাগর নিয়ে অনেক কথা বললেন। কালীচরণ শুনতে শুনতে কেমন আনমনা হয়ে গেল। গরিবের ছেলে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনের কথাগুলো ও আজ বেশ বুঝতে পারছিল। কোথাও কোনো জটিলতা নেই, সব জলের মত পরিষ্কার। শুনতে শুনতে ওর মনের ভেতরটা কেমন যেন হু হু করে উঠল। ওই গরিব ছেলেটাই নাকি বড় হয়ে বহু গরিব দুঃখী মানুষদের সাহায্য করেছেন, তাদের সেবা করেছেন। অনুষ্ঠান শেষে হেডমাস্টারের নজরে পড়লো কালীচরণের এর উপর। জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে কালীচরণ কিছু বুঝযে পারলি?  কালীচরণ সচরাচর মুখ তুলে কথা বলে না। আজও দাঁড়িয়ে রইল মুখ গোঁজ করে।  হেড মাস্টার মশাই বললেন যা। তোকে  জিজ্ঞাসা করাই বৃথা!  পরদিন সারা স্কুলে একটা খবর রটে গেল। কালীচরণ নাকি সবুজসাথীর সাইকেলটা সামাই সোরেনকে দিয়ে দিয়েছে। সামাই আর বাবুলাল দুই ভাই। একসাথে স্কুলে আসে। বাবুলালের একটা পায়ে জোর কম। হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। গতকাল অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় কালীচরণ সময়কে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার সাইকেলটা নিবি? তোর ভাইয়ের সুবিধা হবে।
সামাই বলেছিল, খুব ভালো হয়। সাইকেলটা দিতে পেরে কালীচারণের খুব আনন্দ হয়েছিল।    পরদিন স্কুলে কালীচরণকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল। কালীচরণ লজ্জায় সংকুচিত। বিদ্যাসাগর সারাজীবনে এত কাজ করেছেন। আর সে তো মোটে একটা।   হেড মাস্টার মশাই কালীচরণ কে ডেকে পিঠে হাত দিয়ে বললেন, আমি বুঝতেই পারিনি কাল আমাদের বড় বড় কথা গুলো তুই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিস।

No comments:

Post a Comment

বর্ণপরিচয়