স্বাধীনতা তোমাকে খোলা চিঠি
রিমা দাশ, দিল্লি
·
বছরের বিশেষ বিশেষ এক একটা দিনে ভীষণ ভয় করতে থাকে। ভয়টা
তার উচ্ছাসের আবেগের জোয়ার মোবাইলে সামলাই কী করে। এত এত মানুষের
দেশপ্রেম দেশভক্তি সাং বৎসর কোথায় যে লুকনো থাকে কেজানে। বিদেশ না গেলে এখন সমাজে কল্কে
পাওয়া যায়না। ক'জন ঘরের কাছে আরশিনগর
হিমাচলের ছাতরারি গ্রামে ঘুরতে যায়? পাহাড় থেকে সমতলের ঢালে শীতকালে যেখানে দু'পাশ জুরে শুধু হলুদ
আর হলুদ- সর্ষে ক্ষেতে ভরা।
জ্বালা, এই দৃশ্য অনুধাবন
করতে গেলে অকৃত্তিম হতে হয়। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বোল্লেই আমেরিকা ছাড়া আর কিছু হয় নাকি! গড়বেতার গ্রান্ড ক্যানিয়ন
দূরও তো SC/ST. যাক সেসব কথা। আজ স্বাধীনতার চুয়াত্তর
বছর। চাট্টি খানিকথা। এই বৃদ্ধ সংখ্যায় মোড়া দেশকে আমি বড় ভালোবাসি। বিপুল জনসংখ্যার চাপে
পরিবেশ দূষিত। বড় চিন্তা আমার তাকে নিয়ে। তাই মাঠেঘাটে একটা চারাগাছও লাগাই না। অথচ
বৃক্ষরোপণের কত কথা বলি। ছেলে যখন ছোটো তার বেগ পেলে অবলীলায় প্যান্টের চেন খুলে হয়
দেওয়ালে নয়তো কোনো গাছের গোড়ায় নয়তো রাস্তার একপাশে বলি "করে এসো"। বড়বেলার হাতে খড়ির বীজ স্বভাবে বপন করে দিই। আমি বড় ভালোবাসি
নিজের দেশকে। কত কষ্টে বিপ্লবীরা স্বাধীনতা অর্জন করে তাকে " জননী জন্মভূমি শ্চস্বর্গাদপি
গিরিয়সী" করে তুলেছে। তাদের
ফটো তোরঙ্গে যত্নে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ দিনে সেই মহামানব ফুলে চন্দনে চর্চিত হয়ে গৃহস্থের
দেশপ্রেমের ডেডিকেশনের মাত্রা বাড়ায়। বাকী সময় ঐ বন্দিজীবন। মৃত মানুষের প্রতীকী করে
যে ডেডিকেশন দেখান যায় তাও বুঝে ওঠা হয়না। আমি বড়ভালোবাসি আমার দেশকে। ওই তিনরঙকে।
তাইতো স্যান্ডুইচের ডিজাইন বানাই। শাড়ি, সালোয়ার- কামিজ, কুর্তা পাজামার ফ্যাশন
স্টেটমেন্টের অংশীদার হই। তাই শপিংমলে বিদেশী ব্র্যান্ডের দোকানে ঢুকে কেনাকাটা সারি।
বাড়ির সামনের ফুটে স্বাধীনতাত্তোর দেশে যে ভিখারিটা থাকে জলভাতের মতো তাকে প্রতিদিন
দেখি। দুমুঠো খাবার দেবার কথা কখনো ভাবিনা। আমি বড় ভালোবাসি নিজের দেশকে। কাতারে কাতারে
মানুষ অনাহারে দাবার ঘুটির রাজার চালে পথেঘাটে মরে। কপর্দক শূণ্য হয়ে পাড়ি দেয় পায়ের
তলার মাটি খুঁজতে। আমি ড্রইংরুমে বসে বিশাল বড়ো রঙিন টিভিতে ডেভিড্রফের পেয়ালায় চুমুক
দিয়ে বলি – কী দরকার ছিল নিজের
জায়গা ছেড়ে অন্য ভুঁইয়ে ঠাই নেবার। নুন্যতম পেটের দানাপানির তাগিদে সেই ভারতবাসীর টেবিল
টেনিসের পিংপং বলের অবস্থা আমি ভাবলেশহীন চোখে দেখতে থাকি। সেই ভালোবাসায় আটকে থাকে
কৃত্রিম নোনাজল। একটু মেয়েবেলায় বড় হলে শুনতাম তোর বাবামা তোকে বন্ধুদের সাথে একা সিনেমা
দেখার স্বাধীনতা দেয় ? জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে শুনি (এই মাঝ বয়সেও) তোর বর কি ভালো তোকে/তোমাকে বাইরের পুরুষদের
সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়, সবজায়গায় যাবার স্বাধীনতা আছে। অনেক মাথা খাটিয়েও
উদ্ধার করতে পারিনা সেই কথার অর্থ। যতদূর জানি আমি তো পরাধীন নই, স্বাধীন ভারতবর্ষে
জন্ম গ্রহণ করা এক স্বাধীন মত চেতনা প্রকাশে স্বাধীন নাগরিক। স্বাধীনতা আমার জন্মগত
অধিকার। তারজন্য বাবা-মা কিংবা স্বামীর বা রাষ্ট্রের কাছে কেন ঋণী হব। তবেকি স্বাধীনতা শুধুই একটা শব্দ! চুয়াত্তর বছর পেরিয়ে
সে কী শুধু কিছু দেশাত্মবোধক গান, বিপ্লবীর ফটোতে মাল্যদান, ভাষণ আর বর্তমানে মোবাইলে সকাল থেকে মেসেজের আদান প্রদান? জানতে চাই, উত্তর কোথাও নেই।
তাই আপতত অপেক্ষা রাতভোর হবার।
No comments:
Post a Comment