কাদের প্রভাব বিদ্যাসাগরের
জীবন জুড়ে ?
অজয় সান্যাল।
একটা উত্তর পেয়েছি এই প্রশ্নের। তাঁর মা, ঠাকুমা, ঠাকুর্দা, মায়ের মামাবাড়ি ও কিছু শিক্ষকের প্রভাব। মা ভগবতী দেবী। তাঁর মামার বাড়িতে মানুষ।সেখান থেকেই বিয়ে হয় তাঁর। সেই সূত্রেই ওটাই বিদ্যাসাগরের মামার বাড়ি। মামাবাড়ি থেকে বিদ্যাসাগর পেয়েছিলেন মানবিক বোধের দীক্ষা।তাতে মিশেছিল অতুলনীয় বুকভরা স্নেহ ভালবাসা আর সহৃদয়তা, সংবেদনশীলতার পাঠ। যে বাঙলা পৃথিবীর তাঁতঘর। সেই বাঙলাকে বেআব্রু করেছিল শিল্পবিপ্লব জাড়িত ঔপনিবেশিক শাসন। বিদ্যাসাগর বাঙালির লজ্জা ঢাকতে চেয়েছেন। ঠিক যখন ছোটরা উপযুক্ত বস্ত্র না পেয়ে স্কুল যেতে পারছে না, মহিলারা বাড়িতে মহিলারা বস্ত্রাভাবে বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না,বৃদ্ধবৃদ্ধারা অসহায়কাশীবাসী ভাবছে কে তাদের হাতে তুলে দেবে মোটা কাপড় থান।বিদ্যাসাগরের এগিয়ে আসা তাঁর দেওয়া নতুন কাপড় বুকে চেপে ধরে হাড়সর্বস্ব কাতর মানুষ একদিন কি আনন্দে বাড়ি ফিরেছে। বিদ্যাসাগর ফরাসডাঙায়। তিনি হুঁকো খেতেন। এক কুষ্ঠরোগীর সেজে দেওয়া হুঁকোয় টান দিতেই অনেকে হাঁ হাঁ করে উঠেছে ভয়ে আতঙ্কে। বিদ্যাসাগর বলছেন ‘আমার হলে কি করতাম ?’ কলেরা আক্রান্ত রোগী। তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তায়। সেই রোগীকে তুলে এনে নিজের বিছানায় রেখে সেবা করেছেন। আমার ভাবতে ভাল লাগে আজ বিদ্যাসাগরকে নিয়ে প্রচুর গবেষণামূলক কাজ হচ্ছে।তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক ও তার মূল্যায়নের প্রচেষ্টায় লেগে আছেন পরিশ্রমী গবেষক,বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সংস্থা। আগামী দিনে তাঁর কাজের অনেক অজানা দিক সামনে আসবে আমাদের। আমরা সমৃদ্ধ হব। সেটা আমাদের সৌভাগ্য। Indian Association তৈরী হয় ১৮৭৬ সালে। উদ্যোগ নিয়েছিলেন শ্রী সুরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দ মোহন বসু। সদস্য ছিলেন বিদ্যাসাগর। Indian Association এর উদ্যোগ আজ নিমতলা মহাশ্মশানে বসানো হচ্ছে
স্মৃতিফলক। রবীন্দ্রনাথের সমাধির মুখামুখি প্যাসেজের উল্টোদিকে। আগামীকাল উদ্বেধন।
আমার বিশেষ সৌভাগ্য ও আপনাদের সকলের শুভকামনায়
আমি ইসলামপুর, ধানবাদে বিদ্যাসাগরের জীবন ও কাজের
ওপর আয়োজিত সভায় যেতে পেরেছি, বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছি।
কত রকমের বই প্রকাশিত হয়ে চলেছে যা হবে এই বিরাট
জীবনের মণিকণাকে তুলে
আনার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও যার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। আমরা বিহার বাঙালি সমিতির পূর্ণিয়া শাখার তরফ থেকে এই বিশাল দায়িত্বপূর্ণ
কাজে সংশ্লিষ্ট প্রত্যককে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন।
২৬.৯.১৯২০ থেকে ২৯.৭.১৮৯১ এই মহতীজীবনের সময়কাল। শরীর নশ্বর হয় কালের নিয়মে।কাজ বেঁচে থাকে অনন্ত কালের
ব্যাপ্তি নিয়ে। আমরা এগোই। ব্যাপকতার জীবনপথে আমাদের পথচলা। আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন এই মহাজীবন। আমরা চলার পথে একা নই। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করি। বাঙলার বাঘ লিখছেন ‘বিদ্যাসাগর
এই কথাটি আমার নিকট একজন মানুষের নাম মাত্র নয়। ইহা আমার নিকট একটি মন্ত্র স্বরূপ।’
আজকে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তিরোধান দিবসের
দিনটিতে আমাদের সকলের বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম নিবেদন করছি।
No comments:
Post a Comment