হাজারীবাগে বাঙালিদের অপমান
হাজারীবাগের বনেদি বাঙালি দের বসত বাড়ি কে জবর দখল কারি ভূমাফিয়া’দের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি, জাতীয় মানবাধিকার আয়োগের দ্বারস্থ হবে। সমিতির স্টেট সেক্রেটারি গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন ওই জেলার পুলিশ প্রশাসন ব্যানার্জি পরিবারের নিজের বাড়িতে অবৈধ দখলের মিথ্যা মামলা করেছে। বাড়ির উপর অবৈধ কব্জা কারি রাজীব শ্রীবাস্তব এর নামে ঐ বিষয়ে কেস করা হয়নি। এখানে বাঙালিদের উপর স্থানীয় আধিকারিক’দের মদত পুষ্ট জমি মাফিয়ারা অত্যাচার চালাচ্ছে। হাজারীবাগে আজও বহু পুরাতন বাঙালিদের বাস। তারা বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে রয়েছেন। তাদের অবদান ও প্রচুর। ঐতিহাসিক সেন্ট কলাম্বাস কলেজে একসময় বাঙালি শিক্ষাবিদ’দের আধিপত্য ছিল। ছিল বাঙালি চিকিৎসকদের আধিপত্য। শহরের বারোয়ারি বাঙালি দুর্গা বাড়ি, ব্রাহ্ম সমাজ ইত্যাদির স্থাপনা রায় বাহাদুর যদুনাথ মুখার্জী করেন।
তার প্রজন্মের প্রভাব আজও হাজারীবাগে রয়েছে। শিক্ষাবিদ খড়গ সিংহ ঘোষ, জ্ঞান মৈত্র, সাতকড়ি সরকার, এস কে মল্লিক, ড. শ্যামাপদ সামন্ত ইত্যাদির প্রজন্ম আজও হাজারীবাগেই রয়েছেন। এইরকমই নামকরা বনেদি ব্যানার্জি পরিবারের প্রজন্ম তাদেরই বাড়ির একতলা ভাড়া দেন। ভাড়াটে গঙ্গা প্যালেস নামে একটি ম্যারেজ হাউস শুরু করেন। ব্যানার্জি পরিবার এর বিরোধ করে, বলেন যে এইরকম ব্যাবসার জন্য তারা ভাড়া দেননি। কিন্তু ভাড়াটে তোয়াক্কা করেনি। পাঁচ বছরের ভাড়ার এগ্রিমেন্ট শেষ হবার পরও যখন ভাড়াটে বাড়িটি ছাড়তে অস্বীকার করে, তখন নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বাড়িটি স্থানীয় ছট তালাবের পাশেই। মালিকের নাম তির্থাঞ্জলি ব্যানার্জি। ভাড়াটের নাম রাজিব শ্রীবাস্তব। পরকালে বাড়ির মালিক মামলা জিতেও যান। আদালত রাজিব শ্রীবাস্তব কে বাড়ি ছাড়বার আদেশ জারি করে। কিন্তু বাড়ি খালি না করে উল্টে শ্রীবাস্তব গালি গালাজ শুরু করে। ব্যানার্জি পরিবার গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় ঝামেলা। শ্রীবাস্তব দলবল নিয়ে তার লাইসেন্সি রাইফেল দিয়ে হাওয়ায় গুলি চালায়। যদিও কেউ হতাহত হননি। পুলিশ সুপার কার্তিক এস দলবল নিয়ে পৌঁছান। শ্রীবাস্তব এর রাইফেল ও পিস্তল নিয়ে নেওয়া হয়। দু-পক্ষ আলাদা আলাদা এফ. আই. আর. দায়ের করে, একে অপরকে দোষারোপ করে। তাদের স্থানীয় লোসিংনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও মামলা তির্থাঞ্জলি ব্যানার্জি’র পক্ষে, তাও ওনার অভিযোগ যে ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এবং স্থানীয় সাংসদ এর ইশারায় এই কাজ হয়েছে। তিনি বলেন যে প্রায়ই শ্রীবাস্তব প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আড্ডা জমাতেন। পুলিশ দুপক্ষকেই গ্রেপ্তার করে। রাজিব শ্রীবাস্তব ও প্রেম কুমার রামকে যেখানে রাইফেল ফায়ারিং ও পিস্তল রাখবার জন্য গ্রেপ্তার করে, সেইখানে তির্থাঞ্জন ব্যানার্জি, সৌনক ব্যানার্জি ও দেবজিত ব্যানার্জীকে অনধিকার প্রবেশকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। এই পাঁচজনই বর্তমানে স্থানীয় জেলে। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় যে রাজিব শ্রীবাস্তব অবৈধ ভাবে থাকবার বিরুদ্ধে ব্যানার্জি পরিবার স্থানীয় প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনোই লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। এটা অনেকেই মেনে নিতে পারছে না যে যাদের বাড়ি, যারা মামলা জিতে গেছে, তাদেরই অনধিকার প্রবেশকারী হিসেবে জেলে ঠেলে দেওয়া হয়। শ্রীবাস্তব কে জেল পাঠানো হয় শুধু রাইফেল ফায়ারিং এর জন্য। অবৈধ ভাবে বাড়িতে থাকবার জন্য নয়। এটি অবশ্যই বাঙালিদের অপমান বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের মতে এটি একটি আইওয়াশ মাত্র। এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। উল্লেখ্য হাজারীবাগের বেশ কয়েকটি পুরনো বাঙালিদের বাড়ির মালিক বর্তমানে অবাঙালি। এইসব জমি বাড়ি বেশিরভাগই খাস মহলের। জমি মাফিয়ারা প্রথমে বাড়ি ভাড়ার নামে এগ্রিমেন্ট করায়। পরকালে বাড়ি না ছেড়ে মালিকদের কোনো না কোনো ভাবে বিরক্ত করে, বাড়ী বিক্রির চাপ সৃষ্টি করে। তিতিবিরক্ত হয়ে তারা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। বাজার দামের অর্ধেক টাকায় কেনা হয়। এগ্রিমেন্টের সময় অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়। শেষ টাকা নিয়ে হয় আদালতে মামলা চলে বা বলা হয় রেজিস্ট্রির সময় দেওয়া হবে। এই ভাবে বেশ কিছু বাড়ি আজ বাঙালিদের মালিকানার বাইরে। ব্যানার্জী পরিবারের ঘটনাটি অবশ্যই নিন্দনীয় । বাঙালিরা কি এই ভাবেই অপমানিত হতে থাকবে ?
প্রতিবেদন
- সুগত ঘোষ, হাজারীবাগ
Until and unless local bengali community unites and fights for each other like every other community does, these type of incidents will keep happening. As they say United we stand, divided we fall.High time for local Bengali Association to wake up, unite & fight this type of injustice.
ReplyDelete