অন্য এক
অনন্যসুলভ অভয়ারণ্য !
ইউরোপে মহাদেশের দ্বিতীয়
বৃহত্তম দ্বীপ আইসল্যান্ড, দেশটিকে বলা হয় স্বপ্নের মত সুন্দর একটি দেশ। প্রত্যেক
বছরেই নানান দেশ থেকে পর্যটকেরা ওখানে ভ্রমণ করতে যান। বিশেষ করে তারা ওখানকার
বিখ্যাত ডলফিন দেখতে খুব ভালবাসেন। আইসল্যান্ড এর সমুদ্রতীরের নানা ধরণের ডলফিন
ইউরোপ ও আমেরিকান পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।
না, আজকে আইসল্যান্ড
বা ওখানকার ডলফিণের কথা বলতে আসিনি, আজ আপনাদের বলব যা
অনেকের কাছে অজ্ঞাত পরিচয়.... তা হল আমাদের দেশের ডলফিনদের কথা। অন্য দেশ তো দূরের
কথা ভারতবর্ষের অনেকেই হয়তো জানেননা যে এক বিশ্বমানের প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের
দেশেই বিদ্যমান। বিহার রাজ্যের ভাগলপুর জেলায় রয়েছে একটি ডলফিন অভয়ারণ্য। ভাগলপুর জেলার সুলতানগঞ্জ
থেকে কাহালগাঁও প্রজন্ত গঙ্গা নদীর ৫০ কিলোমিটার এর বিস্তার। নদীর এই বিস্তরণ
এলাকা টির ১৯৯১ সালে "বিক্রমশিলা ডলফিন অভয়ারণ্য" নামে নামকরণ করা হয়।
জলজ প্রাণী বিশেষজ্ঞ দের কোথায় এশিয়ায় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গঙ্গা ডলফিনের
এটি একমাত্র সুরক্ষিত ক্ষেত্র। এই গঙ্গা ডলফিন হল ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় জলজ প্রাণী।
গঙ্গা ডলফিন এর আরেক নাম 'সুসুক'।
এক সময় এই জাতীয় ডলফিন
দেশে বহু সংখ্যায় দেখা যেত, এখন মাত্র কোকসো টি রয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ টাই এই অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। নদীর জল অবিরত নোংরা
হতে থাকার কারণে ওদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তা ছাড়া ডলফিন
শিকার এর ঘটনা খবরের কাগজে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে।
২০০৬ সালে গঙ্গা ডলফিনকে IUCN (International Union for
Conservation of Nature) দ্বারা 'Red List of Threatened
Species' এর তালিকায় বিপন্ন প্রাণী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।
কয়েক বছর পর, ৫ই অক্টোবর ২০০৯
এ প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের সভাপতিত্বে জাতীয় গঙ্গা নদী অববাহিকা
কর্তৃপক্ষের (NGRBA: National Ganga River Basin Authority) প্রথম
বৈঠকে গঙ্গা ডলফিনগুলিকে ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী হিসাবে ঘোষিত করার সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়।
কিন্তু নেপাল থেকে নেমে
আসা ঘাগড়া, গন্ডাক এবং কোশি এই তিনটি নদীর প্রবাহ গঙ্গা নদীর জলকে পুনরায় নবীন এবং
সতেজ জীবন দিয়ে থাকে।
আধুনিক সভ্যতার
অত্যাচারের পর আবার নদীটি নতুন করে তৈরি হয়, এবং তারপর স্বচ্ছপ্রবাহ নিয়ে
বিহারের প্লাবনভূমি ছাড়িয়ে বয়ে চলে। এরই মাঝে ভাগলপুরে নদীর বিস্তারণ। তত্পর
পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ এবং তারপরে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়ে থাকে। তার কারণেই
ভাগলপুরে নদীর জল তুলনামূলক ভাবে স্বচ্ছ। আর এই জন্য এই অঞ্চল ডলফিনদের জন্য অনুকুল।
বর্তমানে ওদের সংখ্যা এই
এলাকায় প্রায় ২০০র কাছাকাছি। শহরের কয়েকটি জায়গায় নদীর তীরে এখনও মাঝে মধ্যেই
উল্লম্ফন দিতে দেখা যায়। স্থানীয় মাঝিরা নৌকা নিয়ে নদী পার হওয়ার ক্রমে সুসুক
দের সন্তরণ এর রমণীয় দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। গঙ্গা ডলফিনরা দেখতে সুরূপ হলেও তারা
আমিষভুক, তাদের ডায়েট এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মাছ এবং অন্যান্য উদজ প্রাণী।
এই বিক্রমশিলা অভয়ারণ্যে
অন্যান্য দুর্লভ জলজ বন্যজীবেরও সমৃদ্ধ বৈচিত্র রয়েছে, যার মধ্যে ভারতীয়
উদ্বিড়াল (Lutrogale Perspicillata), গঙ্গা কুমির বা 'ঘড়িয়াল' (Gavialis gangeticus), বিভিন্ন প্রকার এর
কচ্ছপ এবং ১৩৫ প্রজাতির 'জলকুক্কুট' পাখি
রয়েছে।
এছাড়াও এই অঞ্চলটির
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ''বিলুপ্তপ্রায় গরুড় পাখিদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন অঞ্চল
'' হওয়ার অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গরুড় (Greater
Adjutant Leptoptilos Dubius) একটি কিংবদন্তি পাখি যা ভারতীয়
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান বিষ্ণুর বাহন।
অভয়ারণ্য এলাকায়
বিভিন্ন সংরক্ষণের কাজ চলছে। উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে ডক্টর সুনীল চৌধুরীর
নেতৃত্বে বিক্রমশিলা বায়োডাইভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টার (VBREC), পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান
গবেষণাগারের তিমি ও ডলফিন সংরক্ষণ সমিতি (WDCS), এবং ভাগলপুর
বিশ্ববিদ্যালয়, একসাথে মিলে বিক্রমশিলা গঙ্গা ডলফিন
অভয়ারণ্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প শুরু করেছে।
তাছাড়া কয়েক বছর আগে WWF-Indiaও গঙ্গা
নদীর ডলফিনদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য 'ডলফিন সংরক্ষণ
কার্যক্রম' শুরু করেছিল।
নিকটতম রেলস্টেশন 'ভাগলপুর জংশন'। হাওড়া ও শিয়ালদাহ থেকে ভাগলপুর যাওয়ার কয়েকটি ট্রেন আছে। প্রমুখ হাওড়া
- জামালপুর এক্সপ্রেস ও হাওড়া - গয়া এক্সপ্রেস। কম-বেস ১০ ঘন্টার যাত্রা। ভাগলপুরে
কোন সক্রিয় এয়ারপোর্ট নেই। নিকটতম পাটনা এয়ারপোর্ট। পাটনা থেকে ভাগলপুর সড়কপথে
৬ ঘণ্টার রাস্তা।
ভাগলপুরের পশ্চিমে
সুলতানগঞ্জের থেকে নিয়ে ভাগলপুরের পূর্বে কাহালগাঁও পর্যন্ত অঞ্চল টির যে কোনো
পরিচিত ঘাটে গিয়ে নৌকাবিলাস করতে পারেন। পুরোটাই অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়ে। উল্লেখযোগ্য
ব্যারারি ঘাট,
যেখানে বিক্রমশিলা সেতু শুরু হয়।
এছাড়াও ভাগলপুরে ঘুরে
দেখতে পারেন প্রাচীন বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ, জৈন মন্দির,
আজগুবিনাথ ধাম, বটেশ্বরনাথ মন্দির ও শান্তি
বাবা ধাম, বুড়োনাথ মন্দির, রবীন্দ্র
ভবন অর্থাৎ টিলহা কুঠি ও মন্দার পার্বত।
No comments:
Post a Comment