ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান সমিতি
আপনারা হয়তো জানেন যে পশ্চিম বঙ্গ
রাজ্য ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের প্রায় অর্ধেক জেলাগুলোতে প্রায় সকল শ্রেণীর লোকেদের বোল
চালের ভাষা হলো বাংলা। ঝাড়খন্ড আলাদা রাজ্য হওয়ার আগে (অর্থাৎ বিহারের আমলে) এই
সব অঞ্চলগুলোর প্রায় সব কটি স্কুলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছেলে- মেয়েদের বাংলা ভাষার মাধ্যমেই পড়াশুনা করানোর ব্যবস্থা ছিল।
আলাদা রাজ্য হওয়ার পর গত ২০ বছরে
ঝাড়খণ্ডের এই বাংলা ভাষা অধ্যুষিত এলাকার মানুষজন বিকাশ রুপি লোলিপপ এর স্বাদ পেয়েছেন
কি না জানি না তবে এটা নিশ্চিত যে তাঁরা তাদের ছেলে- মেয়েদের মাতৃভাষা (বাংলা)র মাধ্যমে লেখা পড়া করানোর
সুযোগটুকু হারিয়েছেন।
এই সব অঞ্চলে বাংলা ভাষার দহনের কাজ
এখানকার বৃহৎ পুঁজির মালিকেরা (যারা এখানকার মানুষদের নানান ভাবে বিভ্রান্ত করে
এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ জল, জঙ্গল, জমি, জন ও খনিজ পদার্থ লুট করে নিজেরা মালা
মাল হতে পারে তার সুযোগ সন্ধানী) শিক্ষা প্রশাসক, সব কটা রাজনৈতিক দল (বাম ও দক্ষিণ পন্থী) ও মিডিয়ার
লোকেদের সঙ্গে নিয়ে অতি সুপরিকল্পিত ভাবে
করেছে ও এখনও করে চলেছে।
এখানকার নিরীহ মানুষজন সামান্য কিছু
আর্থিক সাহায্য বা সরকারি লাভ পাবার জন্য বাংলা ভাষা কে ত্যাগ করে দিতে সেই
চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা আজও জানেন না যে বাংলা
ভাষার সাথে এক উন্নত নীতি নৈতিকতা ও সংস্কৃতির সাথে সাথে ভাষা - সংস্কৃতি ও মানব
সমাজের বিকাশের উন্নতি করার সংগ্রামের ইতিহাস লুকিয়ে আছে যেটা হিন্দি বা অন্য
কোনো ভারতীয় মাতৃভাষা দিয়ে পূরণ করা যাবে না।
আজ প্রয়োজন এই সব বাংলা ভাষাভাষী
নিরীহ জনগণের মধ্যে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার।
ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান সমিতির সর্ব
ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মাননীয় কাশীনাথ চ্যাটার্জী মহাশয়ের প্রেরণায় দুটি
বাংলাভাষী গ্রামে (প্রথম পটমদা ব্লকের অন্তর্গত কাশ্মার গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন গোলকাটা
মাঝিডিহ গ্রাম ও দ্বিতীয় ঐ অঞ্চলেরই কুমির গ্রাম পঞ্চায়েতের
অধীন লেকড়াকোচা), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ২০০ বছর
জন্মজয়ন্তী পালনের উপলক্ষ্যে বর্ণপরিচয় বই এর এক কপি প্রতি বাড়ি
বাড়ি বিতরণ করি। তাদের বাড়ির মায়েদের বাংলা
ভাষায় (বলা ও লেখা - পড়ার)
প্রচলনকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে।
আমাদের এই সামান্য প্রয়াসকে যে কোনো ভাবে
সমর্থন জানাতে সকল সুহৃদ বন্ধু বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী ও
বাংলাভাষীপ্রেমীদের অনুরোধ জানাই।
ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান সমিতি, ঝাড়খন্ড ও ঝাড়খন্ড বঙ্গভাষী সমন্বয় সমিতি
গত ১৮.১০.২০২০ ঝাড়খন্ড বঙ্গভাষী সমন্বয় সমিতি’র পক্ষ থেকে
জামশেদপুর নিবাসী সন্দীপ সিন্হা চৌধুরী বাবু, তাঁর স্ত্রী - কন্যা সহ দুই সদস্য দেবরাজ দাস ও অনুপম ঘোষ নিয়ে আমাদের সেই দুটি আদিবাসী গ্রামটি দেখতে ও পরিচয় করতে এসেছিলেন, ভারত জ্ঞান
বিজ্ঞান সমিতি, ঝাড়খন্ড এর তরফ থেকে মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা
করেছি।
ওনারাই
প্রথম আমাদের সেই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে আমাদের এই পরিকল্পিত কাজের রুপায়নে
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের ৫৫ টা বর্ণপরিচয় ও ২১ টা কিশলয় প্রথম
শ্রেণী পাঠ্য পুস্তক দান করলেন। আমরা তাঁদের এই মহৎ কাজের জন্য সাধুবাদ জানাই।
এর
পর আমরা আপনাদের সকল বাংলা প্রেমীদের কাছে অনুরোধ করবো সেই গ্রামে বাংলা ভাষায়
পঠন পাঠন শুরু করতে যে তিনজন (ঐ গ্রামেরই শিক্ষিতা মহিলাদের নির্বাচিত করে)
শিক্ষিকা হিসাবে নিযুক্ত করা হবে। তাদের মাসোহারা (অন্তত পক্ষে ৬ থেকে ১২ মাস
অব্দি) কম পক্ষে ১০০০ টাকা প্রতি শিক্ষক আর্থিক সাহায্য দানের স্পনসরশিপের
জন্য হাত বাড়িয়ে দেবেন।
শ্রী সন্দীপ সিন্হা চৌধুরী জানান যে – গত নভেম্বর ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ড
বঙ্গভাষী সমন্বয় সমিতির “ভাষারথ”এর শুভ
সূচনা করেন শ্রীপার্থ দে, মাননীয় প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আমরা এক
(১) লক্ষ “কিশলয়” বই পেয়েছিলাম শ্রীসুদর্শণ রায়চৌধুরী উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রীর
উদ্যোগে এবং দশ (১০) হাজার কপি “বর্ণপরিচয়” পেয়েছিলাম সর্বভারতীয় বঙ্গভাষী সমিতির
উদ্দ্যগে। সেই
সময় সর্বভারতীয় বঙ্গভাষী সমন্বয় সমিতি সভাপতি ছিলেন শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ঝাড়খণ্ড বঙ্গভাষী সমন্বয় সমিতির সভাপতি ছিলেন শ্রী বিকাশ
মুখার্জী।
প্রতিবেদন – ড০ মদন সরকার
No comments:
Post a Comment