ফুলমতী ।
লোপামুদ্রা সিংহ দেব।
সাত সকালেই আমার মাথায় বজ্রাঘাত। কাজ করতে এসে ফুলমতি বললো ‘আমি কাল থেকে আর কাজে আসবো না’, হঠাৎ এই কথা! আমারই কোনও দোষ হলো নাকি! খোসামোদের সুরে জিজ্ঞেস করলাম-‘কি হলো বেটা? কেন আসবি না’? ‘আমার শাদী পরশু’। ‘শাদী’- আকাশ থেকে পড়লাম কথাটা শুনে। সবে চোদ্দ পেরিয়ে পনেরোতে পা দিয়েছে, আমার কাছে বসে কিছু কিছু পড়াশোনা,শেলাই শিখছে-তার কিনা ‘শাদী’! এদিকে ফুলমতি চা খেতে বসে মহানন্দে তার হবু বরের গল্প বলতে লাগলো। তারা নাকি কোন মজফরপুর থেকে এসেছে জীপ নিয়ে। বাবা,ছেলে, ছেলের বন্ধু আর ছেলের পিসি । উঠেছে চাইবাসার হোটেলে। গতকাল দেখে গেছে পরশুই বিয়ে। আর যাবার সময় নাকি ওর বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। বাবা,মা ভীষণ খুশি এমন জামাই পেয়ে। বুঝলাম ফুলমতীও বেজায় খুশি। আমার মনটা কেমন ‘কু’-গাইতে লাগলো। এ কেমন বিয়ে! অচেনা,অজানা একটা লোক,কটা টাকা দিয়ে তো কিনে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটাকে ।
স্কুল যাবার পথে ফুলমতীর মা’র সাথে দেখা,তার কথা বলার সময় নেই। তবু তাকে জোর করে দাঁড় করিয়ে আশংকার কথা জানালাম। হেসেই উড়িয়ে দিলো ফুলমতীর মা। বুঝলাম টাকার যাদু একেই বলে। শুনবেও না,মানবেও না আমার কথা। তাই কিছু টাকা দিলাম বিয়ের উপহার হিসেবে।
ফুলমতীর বিয়ের দিন দুপুরে আমরা চাইবাসা থেকে ফিরছি-দেখলাম লাল সাড়ি, সিঁদুর ভর্তি কপাল-জিপে করে ফুলমতী চলেছে তার বরের সাথে।ষন্ডামার্কা চেহারার তিনজন লোক আর এক বুড়ি সেই জিপের সওয়ার। সন্দেহটা আরও দৃঢ় হলো। ফেরার পথেই থানায় হাজির হয়ে সব কথা জানালাম বড়বাবুকে। দেখলাম উনিও একটু চিন্তান্বিত। বললেন খবর পেয়েছি একটা গ্যাং মেয়ে পাচারের নতুন ফন্দি বের করেছে, খোঁজ নিতে হচ্ছে-বলে তিনি ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমরাও বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।
নাঃ সাতদিন হয়ে গেল ফুলমতির কোন খবরই যোগাড় করতে পারলোন�
No comments:
Post a Comment