জয়ন্ত ঘোষ: বাংলাভাষী সংগঠনের এক নক্ষত্র

                    

      জয়ন্ত ঘোষ:  বাংলাভাষী সংগঠনের এক নক্ষত্র 

                                                                                                                                        

জামশেদপুর। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষের প্রয়াণে বাংলাভাষী  মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক কথায় বলা যেতে পারে বাংলাভাষী সংগঠনের এক নক্ষত্র পতন ঘটলো। ঝাড়খণ্ডের একাধিক বাংলা ভাষী সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। ঝাড়খণ্ড বঙ্গভাষী সমিতি, জামশেদপুর বেঙ্গল ক্লাব, মিলনী সহ প্রমুখ।  নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন জয়ন্ত বাবু। ১৯৯৪ -৯৬ সালে কেন্দ্রীয় কার্যকরী সমিতি'র সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় মুখপত্র "সম্মেলনী"র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬-৯৮ এবং ২০০০-২০০২ সাল পর্যন্ত। ২০০২ সালেই জবলপুর অধিবেশনে সাংগঠনিক পুরস্কারে সম্মানিত হন জয়ন্ত বাবু।


২০০৪-২০০৮ কেন্দ্রীয় সাধারণ সচিবের দায়িত্ব পালনের পর পুনরায় কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি রূপে নির্বাচিত হন। ২০১০ -২০১৪ তে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সাধারণ সচিবের পর আবার ২০১৪ -২০১৬ মনোনীত সাধারণ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠার সাথে। ২০১৬-২০২০ তিনি ছিলেন নির্বাচিত সাধারণ সচিব।
বিভিন্ন জায়গায় তিনি সম্মানিত হয়েছেন বহুবার। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহণের পর কোডারমা শাখার সদস্যপদ ত্যাগ করে জামশেদপুর শাখার সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং স্থায়ীভাবে ঐ খানেই বসবাস শুরু করেন।
 

ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনোজ সতপথী জানালেন, জয়ন্ত ঘোষের জীবনের ধ্যান-জ্ঞান ও ভালোবাসা  ধ্রুবতারাসম । জীবনের প্রায় পুরো সময় ও শক্তি তিনি নিখিল ভারতের  জন্য নিয়োজিত করে নিঃশেষ করে দিয়েছেন নিজেকে । ২০০১ ও ২০০৯ সালে চাইবাসার সর্বভারতীয় সম্মেলন এবং চক্রধরপুর, চাইবাসা, নোয়ামুন্ডিতে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনগুলিকে সর্বতোভাবে সাফল্য মণ্ডিত করার পেছনে তাঁর সাহচর্য ও অবদান ছিল অপরিসীম। শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছনো এই সংগঠনকে নিয়ে তাঁর যে স্বপ্ন ছিল, তা ঐক্যবদ্ধভাবে পূরণের দায়িত্ব আজ আমাদের সকলের ।

মহারাষ্ট্রের নাগপুর নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি  মন্দিরা গাঙ্গুলী জানালেন,  জয়ন্ত বাবুর সাথে ৩০ তারিখ দুপুরেও কথা বলেছি, তিনি আজ প্রাক্তন। প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক  একবাক্যে এতটুকুই বলতে পারি সংস্থার জন্য নিবেদিতপ্রাণ।  সকলকে সাথে নিয়ে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা, দৃঢচেতা, স্পষ্টবক্তা এবং স্নেহময় মানুষ ছিলেন।

আসাম নিবাসী সহ  নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি  বিধানচন্দ্র দেব রায় জানালেন, দক্ষ সংগঠক ছিলেন জয়ন্তদা । দিনের সর্বক্ষণ ব্যয় করতেন সম্মেলনের চিন্তায়। প্রতিটি শাখা ছিল তাঁর নখদর্পণে, যোগাযোগ রাখতেন সকলের সাথে নিয়মিত। গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন সকলের কাছে, আর অধিবেশনগুলির গুণগত মান উঠে এসেছিল এক উচ্চ মাত্রায় তাঁর অদ্ভুত ক্ষমতাবলে।

নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য সমিতির সচিব অনিল ধর জানালেন, সত্তরের দশক থেকে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সাথে যুক্ত। কিন্তু, জয়ন্তদা  আমার দেখা একজন অদ্বিতীয় সাধারণ সচিব। ১৮ বছর খুব কাছ থেকে দেখে বুঝেছি তাঁর দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা পরায়ণতা আর ভুল স্বীকার করার মতো উদার মানসিকতা। কলকাতা বইমেলায় স্টল, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বই প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কার্যপরিধি আরও বিস্তৃত, প্রসারিত করে দিয়েছিলেন তিনি। মাস কয়েক আগে একসাথে কত পরিকল্পনা, কত স্বপ্ন। তাঁর এইভাবে চলে যাওয়া সত্যি অকল্পনীয়।

ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের কেন্দ্রীয় আইনি পরামর্শদাতা মদনমোহন দরিপা জানালেন,  জয়ন্ত ঘোষ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই ভাবাই যায় না। ঘনিষ্ঠতার সূত্রে ওকে খুব কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। সম্মেলন অন্ত প্রাণ ছিল। ওর অবদান ব্যর্থ যেন না হয়, আর সম্মেলনের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক সকলের মিলিত প্রয়াসে এটাই হবে ওর প্রতি আমাদের সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ঝাড়খণ্ডের রাঁচি নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের
  আঞ্চলিক সমিতি' (বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওডিসা)  সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য জানালেন,  জয়ন্তদা আমাদের কাছে প্রেরণা স্বরূপ।সংস্থার শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে তাঁর অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও জানি, জয়ন্তদার অভাব কখনো পূর্ণ হবে না।

নিউ দিল্লি নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের  কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ কনকেশ চক্রবর্তী জানালেন, নিউ দিল্লি কালীবাড়ির সাথে ২৮ বছর যুক্ত থাকাকালীনই জয়ন্তদার সাথে পরিচয়, পরে ঘনিষ্ঠতা। ব্যাঙ্গালোর অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব গ্রহণ করি। একসাথে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছি ওনার সুচিন্তিত পরামর্শ। সংস্থার জন্য ওনার অবদান সত্যি অবিস্মরণীয়। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে ছিল ওনার অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। আফশোষ, দেখে যেতে পারলেন না।

জামশেদপুর নিবাসী সহ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনের টাটানগর শাখার সচিব শঙ্কর শূর জানালেন, সর্ব ভারতীয় সচিব জয়ন্ত ঘোষ মহাশয়ের প্রয়ানে আমরা টাটা নগর শাখা'র সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত  ও শোকাহত। ২০১৮ সালের আঞ্চলিক সম্মেলন করার সময় ওনার সানিধ্য পেয়েছি খুব কাছ থেকে। আমাদের ছোট শাখা এত বড় অনুষ্ঠান কখনো করিনি কিন্তু জয়ন্ত দা এমন ভাবে পথ দেখিয়ে দিলেন  যেন মনে হলো কত সহজ কাজ।ওনার দিশা নির্দেশ ছাড়া এত বড় কাজ করতে পারতাম'ই না। অত্যন্ত সংগঠন প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। সংগঠনের ভালোর জন্য উনি যা ইচ্ছে করতে পারতেন। ওনার শূন্য স্থান পূরণ হওয়া  মুশকিল। ওনার অভাব সব সময় অনুভব করব।

প্রতিবেদন - চিত্রদীপ ভট্টাচার্য্য 

No comments:

Post a Comment

বর্ণপরিচয়