নজরুল স্মরণে'.......... ~ড. আশিস্ কুমার সিংহ

 'নজরুল স্মরণে'..........

~ড. আশিস্ কুমার সিংহ


প্রথম পর্ব


"নজরুল" বাঙলার কবি, তিনি ভারতের কবি, আবার তাঁকে বিশ্ব মানবতার কবি বললেও কোন অত্যুক্তি হবে না, বরং এই ভাবনাটিকে আজকের দিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলির মূল মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে আমি আমার 'কবি - প্রণাম' পর্ব আরম্ভ করলাম।



সর্বজনীন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সর্বকালীন কবিও তিনি। ধর্মে - ধর্মে, মানুষে - মানুষে সেতু বন্ধনের কবিও‌ তিনি।  কবি ছাড়াও তিনি একাধারে ছিলেন ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, এমনকি প্রাবন্ধিকও। এছাড়াও তিনি ছিলেন সাংবাদিক, সম্পাদক এবং অনুবাদক। এগুলি ছাড়াও তাঁর আরেকটি বড়ো পরিচয় আছে..... তিনি সংগীত জগতের একজন মহান ব্যক্তিত্ব.... তিনি গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত শিক্ষক এবং সংগীত পরিচালক। তিনিই 'চির - উন্নত - শির' পরিপূর্ণ একজন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে সাহিত্য চর্চা করার সময় তিনি বেশি পাননি, আর দেখবো যে ১৯২০ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর ছিল আমাদের কবির সাহিত্যিক জীবন আর এই অল্প সময়ে তিনি যা কিছু লিখেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে গীতি কবিতাই ছিল তাঁর প্রতিভার স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্র। এই কারণে মাঝে - মাঝেই মনে এই প্রশ্ন জাগে যে তিনি যত বড় কবি, তারচেয়ে বড় গীতিকার ছিলেন, যদিও এই ধরণের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কিংবা দেওয়া এই সামান্য রচনায় কখনো সম্ভব হতে পারেনা। তবে এখানে শুধু আমরা এইটুকু বলবো যে তিনি একাধারে 'জনগণের' কবি ছিলেন আবার 'জনগনের গীতিকার'-ও। নিজের সৃষ্টিতে তিনি যে সমাজের ছবি এঁকেছেন, সেই ছবি কেবল মাত্র সেই সমাজের হয়ে থাকেনি বরং সব সমাজের, সব সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর সৃষ্টিতে আনন্দ পেয়েছে। তার মানে হলো দেশ - কাল - পাত্রকে অতিক্রম করে তাঁর সৃষ্টি চিরন্তন মানুষের ব্যথা - বেদনা ও আশা - আকাঙ্ক্ষার একটা রূপকে সকলের মাঝে সজীব করে তুলতে পেরেছে বলেই শিল্পী নজরুল আজ‌ও আমাদের মাঝে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন।আজ ১১ই জ্যৈষ্ঠ। আমাদের কবির ১২৩-তম আবির্ভাব দিবসে আমি তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করছি। 


এপার বাংলা আর ওপার বাংলার প্রিয় কবি নজরুলের জন্ম এপার বাংলার বর্ধমানে আসানসোলের কাছে চুরুলিয়ায় -----১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইং ১৮৯৯ সালের ২৫-এ মে) আর তাঁর ওপার বাংলার ঢাকা শহরে ২৯-এ আগষ্ট ১৯৭৬-এ দেহাবসান ঘটে। তাঁর বাবা ছিলেন কাজী ফকির আহম্মদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর আমাদের কবির জন্ম হয়েছিল বলে তাঁর নাম দেওয়া হয় 'দুঃখু মিঞা'। মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতার অকাল বিয়োগের ফলে তাঁকে সেই ছেলে বেলা থেকেই সংসারের নানাবিধ অবাঞ্ছিত জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে হয়। ফলে ধারাবাহিক শিক্ষা নয়, খাপছাড়া ভাবে তিনি পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের সৌভাগ্য ক্রমে এই অনিয়মিত ভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করা কালে তিনি প্রখ্যাত কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিককে নিজের শিক্ষাগুরু এবং সহপাঠী হিসেবে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গ লাভ করেছিলেন।

No comments:

Post a Comment

বর্ণপরিচয়