গোপাল চন্দ্র লালা– জ্ঞান ও বিনয়ের এক বিরল প্রতিমূর্তি : গৌতম চট্টোপাধ্যায়, দুমকা

 গোপাল চন্দ্র লালা– জ্ঞান ও বিনয়ের এক বিরল প্রতিমূর্তি :

 গৌতম চট্টোপাধ্যায়, দুমকা

শেষ রক্ষা হল না। একদিকে নিরাময়ের লক্ষ্যে নিরন্তর প্রার্থনা অন্য দিকে বিজ্ঞানের যারপরনাই আয়োজন, সব সরিয়ে দিয়ে প্রকৃতির আইন নিজস্ব রায় ঘোষণা করে দিল।সেই আইনের ধারায় অনন্ত কালের সময় কারও কপালে বরাদ্দ নেই।বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের উপাধ্যক্ষ ও একনিষ্ঠ কর্মী গোপাল চন্দ্র লালা চিরতরের জন্য ঘুমের দেশে চলে গেলেন ।

 


তার ছিল   বৈচিত্রময় ব‍্যক্তি-জীবন। পারিবারিক আদি নিবাস –বিহারের বড়কী বিহারী গ্রাম। সেই সূত্রে মাতৃভাষা ভোজপুরী। আবার পূর্ব পুরুষের পূর্ব বঙ্গে অবস্থানের প্রেক্ষিতে জন্ম সেখানে(২২শে নভেম্বর ১৯৩৪,নিজস্ব স্বীকারোক্তি অনুযায়ী)। স্কুল শিক্ষাও বাংলা ভাষায়, সেইখানে।দেশ ভাগের সময় পরিবারের সাথে এপারে চলে আসা এবং বিহারে শিক্ষা গ্রহণ। পরবর্তীতে ভারতীয় রাজস্ব বিভাগের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক হিসেবে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান। দীর্ঘ সময় উড়িষ‍্যায় বসবাস। মাতৃভাষা ভোজপুরী ছাড়াও বাংলা, হিন্দী,ওড়িয়া ও ইংরেজী চারটি ভাষায় অকল্পনীয় দক্ষতা।আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, সেখানকার সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, লোকাচার বিষয়ে গহন অধ‍্যয়ন,চর্চা ও আত্মিকরণ অবলীলায় যেন করে ফেলেছেন। অসামান‍্য স্মৃতির জোরে মানুষটি ছিলেন যেন সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের এক চলমান বিশ্বকোষ। উপরন্তু বহু বর্ণচ্ছটায় উদ্ভাসিত মানুষটির ব‍্যক্তিত্ব। বিভিন্ন রচনায়–গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, বিভিন্ন সমারোহে বক্তৃতায় যুক্তিবাদি মন ও বিজ্ঞান মনস্কতাকে উজাড় করে গেছেন আমাদের লালাবাবু।

   বিদ্বজ্জন ঠিক কথাই বলেন, যে গাছে যত বেশী ফল ধরে, সে গাছ তত বেশী ঝুঁকে পড়ে।জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শিল্পসত্তা ও মানবতাবাদের প্রতিমূর্তি গোপাল চন্দ্র লালার মত বিনয়ী ও মাটির কাছাকাছি মানুষ সমাজে বিরল। এই মানুষটির সান্নিধ্য পাওয়া নিজের গৌরব। অঙ্গীকার করি, যেন এই গৌরব সযত্নে রক্ষা করে চলি।বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি, ঝাড়খণ্ডের স্টেট সেক্রেটারি ও বাংলা একাডেমি ঝাড়খণ্ডের আজীবন সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় গোপাল বাবুর প্রয়ান কে রাজ্যের ভাষা সংস্কৃতির উন্নয়নে অপূরণীয় ক্ষতি বলেছে ।

No comments:

Post a Comment

বর্ণপরিচয়